খুলনায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন মাদ্রাসার হুজুর ও কসাইরা।
তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দাম তো নয়ই, দিচ্ছেন গত বছরের চেয়েও অনেক কম।
মহানগরীর চামড়াপট্টিতে রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বড় গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ছোট গরুর চামড়া ৩০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া হয় এমনিতেই রেখে দিচ্ছেন অথবা ৫-১০ টাকা দিচ্ছেন।
কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলেও চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিক্রেতাদের দামেই দিয়ে দিচ্ছেন হুজুর ও কসাইরা।
মো. মাসুদ নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৬ থেকে ৭ লাখ টাকা দামের তিনটি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছি। সরকার নির্ধারিত দাম নয়, তিনটি মিলিয়ে ৩ হাজার টাকা চাচ্ছি, কিন্তু তাও দিতে রাজি নয় কেউ। তারা সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দিতে চায়।’
নগরীর মহিরবাড়ী খালপাড় এলাকার দারুল উলুম মহিলা মাদ্রাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হুজুর ১০টি চামড়া বিক্রি করেছেন চামড়াপট্টিতে।
তিনি জানান, বড় গরুর চামড়াগুলো বিক্রি করেছেন ৫৫০ টাকা দরে আর ছোট গরুগুলোর ৩০০ টাকা দরে। সঙ্গে দুটি ছাগলের চামড়া এনেছিলেন। ব্যাপারী সেগুলো ফ্রিতে রেখে দিয়েছেন এবং উল্টো লবণের দাম চেয়েছেন।
ঈদের আগেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবার ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, গরুর আকৃতি ও ওজনভেদে চামড়ার পরিমাপ কমবেশি হয়। সাধারণত গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ বর্গফুট পর্যন্ত হয়। আর ছাগল-খাসির চামড়ার গড়হার হচ্ছে সাড়ে ৪ বর্গফুট।
খুলনার চামড়াপট্টির ব্যাপারীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে সেই দামে তারা ট্যানারিতে বিক্রি করতে পারেন না। তা ছাড়া ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকাও ঠিকমতো দেন না।
একসময় খুলনার চামড়াপট্টিতে ৪৫টির মতো দোকান থাকলেও এখন কোনো স্থায়ী দোকান নেই। চামড়া কেনাবেচা হয় রাস্তার ওপর। তারপর সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে রূপসা এলাকায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
নগরীর শেখপাড়া চামড়াপট্টির মেসার্স কার্ত্তিক এন্টারপ্রাইজের মালিক কার্ত্তিক ঘোষ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে আমরা ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে পারি না। সরকার নির্ধারিত দাম চাইলে তারা বলে যাও সরকারের কাছেই বিক্রি করো। আমরা নেব না।
‘তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। নিরুপায় হয়ে তাদের কাছে কম রেটে চামড়া দিতে হয়। এ কারণেই আমরা কম রেটে বাজার থেকে চামড়া সংগ্রহ করছি।’
আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ইয়াসিন লেদারের মালিক আবু জাফর বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমাদের কয়েক পুরুষের চামড়ার ব্যবসা। ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আমরা বকেয়া টাকা পাচ্ছি না। আমরাই চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাই না।
‘১১ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন ট্যানারি মালিকের কাছে আমাদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আটকে আছে।’