ক্রেতাশূন্য হাট বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জমতে শুরু করেছে। বেড়েছে কোরবানির পশু বিক্রি। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাজধানীর হাটগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর অন্যতম গাবতলীর পশুর হাটে অসংখ্য ক্রেতার উপস্থিতি দেখা গেছে শুক্রবার বিকেলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু এসে নামছে গাবতলীর হাটে।
বিক্রেতারা বলছেন, গতকাল রাত থেকেই বাজারে বিক্রি বেড়েছে। এ সময় বিক্রি বেড়েছে ছোট আর মাঝারি গরুর। এসব গরুর দাম মোটামুটি লাখ টাকার নিচে আর দেড় লাখের মধ্যে।
তবে এমন গরুর বিক্রি বাড়লেও কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের মধ্যের গরু। ফলে বড় সাইজের গরু নিয়ে শঙ্কায় থাকছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার বাজারে গরুর দাম বেশি। এখনো গরুর বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না। আজ সন্ধ্যার পর রাতে বাজার বোঝা যাবে।
গাবতলী হাটে সকাল থেকেই প্রচুর ক্রেতা উপস্থিতি বলে জানান হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। জানায়, সন্ধ্যার পর থেকে হাট আরও জমে উঠবে। ঈদের আগের দিনই গাবতলীতে বেচাকেনা ভালো হয়।
সাভার থেকে ৪টি গরু নিয়ে বৃহস্পতিবার গাবতলী হাটে আসেন শরিফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতের মন লাইভ ওয়েটের একটা গরুর দাম চাইতেছে সাড়ে চার লাখ টাকা। বড় গরুর বাজার এখনো জমেনি, তবে ছোট গরুর বিক্রি বাড়ছে।’
বড় গরু নিয়ে সমস্যায় আছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে যদি একটু বাজার ভালো হয় তাহলে তো খুব ভালো হয়। বিক্রি হবে কি না সেটা নিয়েও শঙ্কায় আছি। নিয়া আবার বাড়ি ফেরত যেতে হবে কি না কে জানে।’
কুষ্টিয়ার মজিবুর রহমান গাবতলী হাটের বাজার খুব একটা ভালো নয় বলে জানান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গরু নিয়ে আসলাম ১৬টা, বেচতে পারছি পাঁচটা।’
গত সোমবার গরু নিয়ে গাবতলী এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১২ মণ ওজনের এই গরুর দাম চাইতেছি সাড়ে চার লাখ। তিন লাখ হইলে বেচি ফেলবো। গতকাল রাইত থেকে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আর ছোট গরুর বাজার ভালো। বড় গরু বিক্রি কম।’
শুক্রবার সকালেই মানিকগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে এসেছেন মিনারুল আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২ লাখ ৩০ চাইছি দাম। কেউ ১ লাখ কয়, কেউ ১ লাখ ২০ কয়।’
তিনিও জানান ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বলেন, ‘এই গরুডার দাম ১ লাখ টাকা কয়; তখন কষ্ট লাগে না কন! ধরেন যে যখন কিনছি তাও এই দামে কিনতে পারি নাই। তারপর যে খাওয়াইছি ভুসি বস্তা ২২০০ টাকা দিয়া, ছোলা আছে ভুসি আছে। ছোলার দাম আছে। কিনার সময়ের দাম কয় না, তাইলে বুঝেন এলা কেমন বাজারডা আছে।’
এদিকে বাজার এখনো ভালো না, আগেও ভালো ছিল না বলে মনে করছেন রাজবাড়ী থেকে আসা গরু বিক্রেতা মাসুম শেখ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গরুর দাম চাইতেছি আড়াই লাখ টাকা। মাইনষে কয় দেড় লাখ টাকা। তাইলে হয় কন?’
২২টা গরু নিয়ে ফরিদপুর থেকে এসেছেন দুলাল মৃধা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতারা কম বলতেছে। গরু কিনা লাখ ২০, দাম কয় ৮০ হাজার টাকা। আশা করতেছি বাজার আরও ভালো হবে। মাঝারি গরুর চাহিদা একটু বেশি। বড় গরুর চাহিদা কম।’
মাঝারি সাইজের সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন সাইদুল শেখ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চারটা গরু বেচছি। আইজ শুক্রবার তো। বাজার বুঝা যাবে রাতের পর। এক লাখ, দেড় লাখ টাকা দামের যে গরু আছে, সেই গরুর বাজার ভালো। বড় গরুওয়ালারা ধরা। চারটা গরুই ১ লাখ ২০ হাজারের উপরে বেচেছেন।’
সকাল থেকেই বিক্রিটা কিছু বেড়েছে বলে জানান গাবতলী গবাদি পশুর হাট ইজারাদার ম্যানেজার আবুল হাশেম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ক্রেতাই হাটে ঢুকছেন। আজকে ভালো অবস্থায় আছি। দেখা যাক কি হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর মাঝারি আকারের গরুর বাজার ভালো। মানুষ ভাগে কোরবানি দেয়। এক থেকে দেড় লাখ টাকার গরু বেশি বিক্রি হইছে। পরিস্থি ভালো। রাস্তাঘাট ক্লিয়ার আছে। কোনো ঝুট ঝামেলা নাই।’
মোহাম্মাদপুর থেকে গাবতলী হাটে গরু কিনতে যাওয়া হোসেন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবার যেগুলো ১ লাখ টাকা ছিল, সে গরুগুলোর দাম চাইতেছে ১ লাখ ২০ কিংবা ৩০ হাজার টাকা। আরও অপেক্ষা করমু। সন্ধ্যা হইলে তারপর কিনমু।’
শ্যামলী থেকে গরু কিনতে আসা মাহমুদুর রহমান একই সুরে কথা বলেছেন। বলেন, ‘গতবারের থেকে দাম বাড়ছে। বাজার পড়তে পারে। এখনো দেখতেছি।’