বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পতনমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ ইউটার্ন

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২২ ১৬:২৩

লেনদেনের বিষয়ে এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার ফলে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। এখন আর টাকার প্রয়োজন নেই। ফলে যে টাকা ছিল তাতে কিছু কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা।’

দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির দর বৃদ্ধি প্রবণতার সঙ্গে টানা দুই দিন পতনের পরে ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার। গতি এলো লেনদেনেও।

আগের সপ্তাহে টানা চার দিন সূচকে অল্প অল্প করে মোট ৭৫ পয়েন্ট যোগ হয়। সর্বশেষ কর্মদিবসে লেনদেন ৯০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছিল। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বড় ব্যবধানে লেনদেন হ্রাস পায়, কমে সূচকও। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।

প্রথম দিনে ১৭ ও দ্বিতীয় দিনে ১২ অর্থাৎ দুই কর্মদিবসে ২৯ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পায়। তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার কিছুটা পুষিয়ে দিল ২৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- ইত্যাদি কারণে মন্দা যেন কাটছিল না। এমতাবস্থায় নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশার বাণী শোনান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের ভাষ্যমতে, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়।

কিন্তু অর্থবছরের শুরু দুই দিনে লেনদেন হাজার কোটির কাছাকাছি থেকে ৬০০ কোটির ঘরে নেমে আসে। এতে শঙ্কা তৈরি হয় কোনদিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।

তবে ভাটা পড়া লেনদেনে কিছুটা জোয়ার এলো। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৬ জুন। ওই দিন ডিএসইতে হাতবদল হয় ১ হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকার।

সমানসংখ্যক শেয়ারদর বৃদ্ধি ও পতন হয়েছে। ১৬০টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫৯টির। অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ার।

দুই কর্মদিবস পতনের পর মঙ্গলবার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও

লেনদেনের বিষয়ে এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার ফলে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। এখন আর টাকার প্রয়োজন নেই। ফলে যে টাকা ছিল তাতে কিছু কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। গতকাল দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে ছিল কোম্পানিটি। আজ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বশেষ দাম ১৭৭ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। গতকালও প্রায় সমান পরিমাণ দর বেড়েছিল কোম্পানিটির।

গতকাল ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানি জানায়, তারা অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহের লক্ষ্যে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করে। এ খবরে টানা দুই দিন সর্বোচ্চ সীমায় দর বাড়ল।

২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১৯ পয়সায় আয় হয়েছিল। এরপর টানা চার বছর লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। বিগত দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ ছাড়া সবই নগদ ছিল।

প্রায় একই সমান দর বেড়েছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার।

৮ মাস আগেও বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে শেয়ার লেনদেন হতে দেখা গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর শেয়ারটির দর উঠেছিল ২৩২ টাকা ৯০ পয়সা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন-সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ২০১৮ সালের পরে আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমান কটন লিমিটেড। ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা ৫০ পয়সায়। গতকাল সর্বশেষ দর ছিল ২৭ টাকা ৮০ পয়সা।

গত দুই বছরে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরেরও কম সময়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কোম্পানির দর উঠেছিল ৫২ টাকা ৬০ পয়সায়। এর পরে শুধুই কমেছে দর।

দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায়।

গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেই বছরই বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি। এ ছাড়া তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, শেয়ার প্রতি প্রায় ৩ টাকার মতো আয় রয়েছে।

চলতি বছরের ২২ মে থেকে দর বাড়ছে শেয়ারের। ওই দিন শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।

তালিকার পরের স্থানে থাকা আমান ফিডের দর ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।

২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি প্রতি বছরই নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সঙ্গে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ছাড়া বোনাসও পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ৩১ আগস্ট ৭৮ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার লেনদেনের পর দর শুধু কমেছেই।

তালিকার দশে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সোনালী পেপার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুড ও তিতাস গ্যাস লিমিটেড।

দরপতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষে রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৫০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।

১৩৩ বারে কোম্পানিটির মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৫৯ লাখ টাকা।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ২৬১ টাকা ৯০ পয়সা।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২৪৩ টাকা ১০ পয়সায়। লোকসানে ডুবে থাকা এক কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি কোনো দিনই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

এর পরেই মনস্পুল পেপারের দর ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে ১৫৯ টাকা ৫০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে।

দরপতনের শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে পেপার প্রসেসিং, ইমাম বাটন, নিউ লাইন ক্লোথিং, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, শ্যামপুর সুগার মিলস ও কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ।

সূচক বাড়াল যারা

সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির দর ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে।

সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে রবি। দর ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।

বেক্সিমকো লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এ ছাড়া তিতাস গ্যাস, ওয়ালটন হাইটেক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, সোনালী পেপার ও বার্জার পেইন্টস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট সূচক কমেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট কমিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।

এর পরই স্কয়ার ফার্মার দর শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।

এ ছাড়া আল-আরাফাহ ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং কোম্পানি, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর