নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদনে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রোববার রাতে ‘নিরাপদ ও টেকসই পোলট্রি উৎপাদন: প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা’ শিরোনামে নীতিনির্ধারণী আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ আশ্বাস দেন।
ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সোমবার রাতে আয়োজক সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, পোলট্রি খাতের যেকোনো সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে। পোলট্রিসংশ্লিষ্ট নীতিমালা আধুনিক ও সময়োপযোগী করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। করোনার সময় পোলট্রি খাতে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ প্রাণিসম্পদ খাত নুয়ে পড়লে দেশে আমিষের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে প্রাণিসম্পদ খাত রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
পোলট্রির উন্নয়নে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।তিনি আরও বলেন, পোলট্রি ফিড তৈরির জন্য যে প্রোটিন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় তার ওপর কর নেয়া হয় না। সরকার পোলট্রি খাদ্যের দাম কমানোর জন্য কর রেয়াত দিয়েছে অথচ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তার উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত উপকরণ আমদানি করে গুদামজাত করেছে, বিক্রিও করেছে। এ জন্য প্রোটিন আমদানির অনুমতি কাদের কতটুকু দেয়া হয়েছে সরকার সে তথ্য সংগ্রহ করছে। কার উৎপাদন সক্ষমতা কতটা আছে এবং তিনি কতটুকু কাঁচামাল বাইরে থেকে এনে কতটুকু ব্যবহার করেছেন ও বাকিটা কী করেছেন সেটি জানতে চাওয়া হবে।
সরকার পোলট্রি খাতে সহায়তা করতে চায়, তবে সেটা যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের গ্রহণ করতে বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ খাতে বিদেশনির্ভরতা কমাতে হবে। দেশের ফিড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল তৈরিতে সহায়ক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে মেশিনারিজ আমদানিতে সরকার কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য সুবিধা দেবে। পোলট্রি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে এর সহায়ক খাতও বিকশিত করতে হবে। রাষ্ট্র সব সহায়তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, পোলট্রি শিল্পে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। খামারে দূষণ হলে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ জায়গায় দায়িত্বশীল থাকতে হবে। যাদের বড় খামার আছে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে ভোক্তারা পোলট্রি থেকে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
পোলট্রি থেকে উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য শিল্প স্থাপনের ওপর এ সময় গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। এ ধরনের শিল্প স্থাপনে রাষ্ট্র সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দিতে চায় বলে জানান মন্ত্রী।
ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় পোলট্রি খাত রপ্তানিতেও অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনে সহায়তা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পাটের ব্যাগে পোলট্রি ও মৎস্য খাদ্য মোড়কীকরণের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন ড. চৌধুরী। তিনি জানান, বাংলাদেশ জুট মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি মামলা করেছে, যেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কেও এ বিষয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ওয়াপসা বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, প্রতিটি খামারে অবশ্যই ওয়েস্ট ডিসপোজাল ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনেক বড় কোম্পানিও রাতের আঁধারে পোলট্রি লিটার এখানে-সেখানে ফেলে আসছে। জীবাণু ছড়াচ্ছে। এভাবে আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে কুড়াল মারছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবনিরাপত্তা সন্তোষজনক না হলে লাইসেন্স নবায়ন না করার আহ্বান জানান মসিউর।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আলোচনা সভার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ।