মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির।
গভর্নরের শেষ কর্মদিবসে রোববার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে ফজলে কবির তৃতীয় গভর্নর যাকে এভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় জানানো হলো। ১১তম গর্ভনর হিসেবে ৬ বছর ৩ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি ছিলেন গভর্নরের সহধর্মিনী সাবেক সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ও
ডেপুটি গর্ভনররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিদায়ী গভর্নর বলেন, ‘দেখতে দেখতে ৬ বছর ৩ মাস পার হয়ে গেল। আমার মনে হয় এই সেদিন মধ্যরাতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ফোনে বললেন- সো ইউ আর দি গভর্নর।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর ডলারের রেট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ রেখে যাচ্ছি। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এটা ঠিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
ফজলে কবির বলেন, ‘ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ করার পর সবাই সমালোচনা করে বলেছিল, এটা সম্ভব না। এরপর মুদ্রানীতিতে এখন নীতি সুদহার বাড়ানো হলেও অনেকে একই কথা বলছেন। তারা বলছেন, ঋণের একক সুদ হার তুলে না নিলে নীতি সুদ বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
‘আমি মনে করি এটা কার্যকর সিদ্ধান্ত, যা প্রধান অর্থনীতিবিদ, ডেপুটি গভর্নররা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করছি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফজলে কবিবের কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
গভর্নরের সহধর্মিণী মাহমুদা শারমীন বেনু বলেন, ‘আমার পেশাগত জীবনে কারও বিদায়ে এমন অনেকবার বক্তব্য রেখেছি। কিন্তু আজ সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখাটা ব্যতিক্রম। যে কোনো বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য আবেগময়।’
ব্যক্তিজীবনে ফজলে কবির কেমন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি বাইরে যেমন ভেতরেও তেমন। এক ও অভিন্ন। তিনি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে একজন মানবিক মানুষ। অফিসকে তিনি কখনো পরিবারের মধ্যে নিয়ে আসেননি। পরিবারে তিনি আমাদের কর্তা। বাসার সবার বিষয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
‘আমি কবিতা লিখি। সেটার প্রথম পাঠকও তিনি। আমার লেখার কোনো সংশোধন থাকলে তিনি সেটা বলেন।’
গভর্নরকে নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর খুব ক্রান্তিলগ্নে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনা ফজলে কবির আগে খতিয়ে দেখেছেন। মূল ঘটনা সবার সামনে এনেছেন।
‘ফজলে কবির তার সময়ে অনেক নীতিমালা জারি করেছেন। এ কারণে অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে।
‘করোনার সময়ে তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছেন। করোনায় ব্যাংকাররা মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। পরিবারকে টাকা দেয়ার জন্য বার বার তাগাদা করেছেন। ফলে করোনায় মারা যাওয়া ১৮৯ জন ব্যাংকারের প্রত্যেকের পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘গভর্নর ফজলে কবির মানবিক মানুষ। সমস্যা সমাধানে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। ব্যাংকারদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো করেছেন। এজন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ।’
২০১৬ সালে চার বছরের জন্য গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির। সে হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।
তবে মেয়াদ শেষের ৩৪ দিন আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন।
ফজলে কবিরের ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। তার আগেই মে মাসে তার দায়িত্বের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়।
অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১২ জুলাই তিনি যোগদান করবেন।