বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রপ্তানিতে ভারতে সাফল্য, চীনে হতাশা

  •    
  • ৩ জুলাই, ২০২২ ০৮:১৪

এই অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। তবে চীনে রপ্তানিতে কোনো পরিবর্তন নেই। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

পাশের দেশ ভারতে পণ্য রপ্তানিতে আশা জাগানিয়া সাফল্য অর্জন করে চলেছে বাংলাদেশ; কিন্তু চীনে হতাশা কাটছে না।

২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিদায়ী এই বছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি।

তাতে দেখা যায়, এই ১১ মাসে ভারতে ১৮৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার (১.৮৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) একই সময়ের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরের বাকি এক মাসের রপ্তানির তথ্য যোগ হলে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।

অন্যদিকে চীনে রপ্তানি সেই একই জায়গায় থমকে আছে। এই ১১ মাসে দেশটিতে ৬৩ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

গত দুই অর্থবছরে সব দেশেই বাংলাদেশের রপ্তানি বেশ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারতে। কিন্তু চীনে কোনো পরিবর্তন নেই।

মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সব মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন (৪ হাজার ৭১৭ কোটি ৪৬ লাখ) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ মাস জুনের ২৫ দিনের (১ থেকে ২৫ জুন) রপ্তানির তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। এই ২৫ দিনে ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ইতোমধ্যে আমাদের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে ৫০ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মাসের বাকি ৫ দিনের তথ্য যোগ হলে গত অর্থবছরে মোট পণ্য রপ্তানি প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।

‘আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, এই বছরে আমরা ভারতের বাজারে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে চলেছি। ১১ মাসে ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা হয়েছে। জুনের তথ্য যোগ হলে তা অবশ্যই ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।’

বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ভারতসহ অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শোনান আহসান।

ইপিবির সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে ভারত এখন বাংলাদেশের সপ্তম রপ্তানি বাজারের তালিকায় উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ ১০ বাজারের একটি এখন ভারত।

অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরেও বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ রপ্তানি বাজারের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না। আগের বছরগুলোতে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪ থেকে ১৫তম স্থানে।

সবার ওপরে বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছে। দ্বিতীয় স্থানে জার্মানি। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ড।

পোল্যান্ড ও ভারতে রপ্তানির অঙ্ক প্রায় সমান। জুলাই-মে সময়ে পোল্যান্ডে রপ্তানি হয়েছে ১৯৪ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সেই রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১০৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাত মাসে তা বেড়ে ১২১ কোটি ২৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তা আরও বেড়ে ১৩৬ কোটি ১০ ডলারে ওঠে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এ হিসাবেই এই ১১ মাসে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ভারতে মোট রপ্তানির মধ্যে ৩৬ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। নিট পোশাক রপ্তাানি হয়েছে ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। ৯ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে। কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে এসেছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ২ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ১১ মাসে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এই ১১ মাসে চীনে ১২ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ৯ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। পাদুকা রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে এসেছে ১৬ কোটি ডলার। এ ছাড়া প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানি থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ এবং হোম টেক্সটাইল থেকে ৬৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

সবার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির প্রধান বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশই আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাজারটিতে ৯৪২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

৬৮৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি; রপ্তানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। তৃতীয় যুক্তরাজ্য; রপ্তানির অঙ্ক ৪৪০ কোটি ৩১ লাখ ডলার। ২৮৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে চতুর্থ স্পেন। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স, রপ্তানির পরিমাণ ২৪৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

অন্যান্য দেশের মধ্যে ইতালি বাংলাদেশ থেকে জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১৩৮কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কানাডা ১৫১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, বেলজিয়াম ৮১ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, নেদারল্যান্ডস ১৫৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং জাপান ১২৩ কোটি ১৯ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে।

এ ছাড়া জুলাই-মে সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার এবং তুরস্কে ৪২ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ায় রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। এই ১১ মাসে দেশটিতে ৬১ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি আমরা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ ঠিকমতো না হওয়ায় এবং সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। সে কারণেই মে ও জুন মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে কি হবে তা নিয়ে নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

‘এ অবস্থায় পাশের দেশ ভারতে রপ্তানি বাড়লে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’

ফারুক বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড়শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’

‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।

‘এ ছাড়া গত বছর ভারত সরকারকে বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য দ্রুত ও সহজ করতে আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে।’

সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন ফারুক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও বিকাশমান বাজার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখান থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে লাভবান হতে পারেনি। বৈশ্বিক বাজার থেকে ভারতের আমদানির মোট মূল্যমান প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার।

‘এখন ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। সেটা কিন্তু ভারতের দেড়শ কোটি লোকের বিশাল বাজারের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এখন দুদেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে, সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, পাশের দেশ হওয়ায় ভারতে খুবই কম খরচে আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারি। এতে রপ্তানিকারকরা বেশি লাভবান হয়। তাই ভারতে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কুটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি।’

একই সঙ্গে চীনের বাজার ধরতেও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এ বিভাগের আরো খবর