বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোটরসাইকেলে আরও গতি চায় সরকার

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২২ ০৯:৪২

মোটরসাইকেল উৎপাদনে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১০ কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। এদের সম্মিলিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। দেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন।

দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোটরসাইকেলের গতি আরও বাড়াতে চায় সরকার। বর্তমানে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক মোটরসাইকেল স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে। সরকার চায় এগুলোকে ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যেতে।

মোটরসাইকেল উৎপাদনে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১০ কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। এদের সম্মিলিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার লোকের।

কোম্পানিগুলো যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দেশে মোটরসাইকেলের একটা স্থায়ী বাজার তৈরি করেছে। এখন চেষ্টা সেই বাজার অংশীদারত্বকে আরও বড় করার। এ জন্য ক্রেতা টানতে মোটরসাইকেলে যুক্ত করা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। নতুন ডিজাইন করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে ইঞ্জিনের শক্তি। এ উদ্যোক্তাদের নীতি-সহায়তা দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিতে চায় সরকার। এবারের বাজেটে সেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

দেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। ছবি: নিউজবাংলা

ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন চারটি ধাপে জ্বালানিকে ব্যবহার উপযোগী করে। এটি একই সঙ্গে যেমন জ্বালানি-সাশ্রয়ী, তেমনি মাইলেজ বেশি, শব্দ কম এবং তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব। অন্যদিকে টু স্ট্রোক ইঞ্জিন দুই ধাপে জ্বালানিকে ব্যবহার উপযোগী করে। তবে এ জ্বালানির একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থাকে। ফলে এর জ্বালানিও বেশি লাগে এবং এটি কালো ধোঁয়া উৎপন্ন করে।

সরকারের পরিকল্পনা হলো আগামীতে দেশে তৈরি সব ধরনের মোটরসাইকেল হবে আরও বেশি গতিসম্পন্ন। তাই কারখানায় ফোর স্ট্রোক বা টু স্ট্রোক ইঞ্জিন মোটরসাইকেলের উৎপাদন বা সংযোজন পর্যায়েই দুই চাকার এই বাহনটির গতি ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসেবে উচ্চগতির মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে।

বাজেটে কী পেল মোটরসাইকেল খাত

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশে ২৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল প্রস্তুত করার কারখানা গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটারসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে।

অর্থমন্ত্রী ২৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এবং টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করেছেন বাজেটে।

খাতসংশ্লিষ্টরা এই বাজেট পদক্ষেপের পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, মোটরসাইকেল ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে রাজস্ব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় মোটরসাইকেল শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো ও উৎপাদিত কিংবা সংযোজিত মোটরসাইকেলের গতিকে উন্নত দেশের মতো করা, যাতে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও উন্নত দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়। একই সঙ্গে আমদানিনির্ভর বিদেশি মোটরসাইকেলের প্রতি ঝোঁক কমিয়ে ক্রেতাকে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল কিনতে উৎসাহিত করাও উদ্দেশ্য।

এ ক্ষেত্রে আরেকটি উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে মোটরসাইকেলের মতো বিলাসপণ্যের আমদানি ঠেকাতে ক্রেতাকে নিরুৎসাহিত করা, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অহেতুক অপচয় রোধ করতে ভূমিকা রাখবে।

বাড়ছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার

দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয় উৎপাদনও। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। অর্থাৎ ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৯৮ গুণ)। এখন দেশে সর্বনিম্ন ৭৭ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে প্রায় সব ব্র্যান্ডের যেকোনো মডেলের মোটরসাইকেল মিলছে।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৯ লাখ ৯১ হাজার।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, সম্প্রতি দেশে ভাড়ায় চালিত অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল বৃদ্ধির কারণে এর ক্রয়-বিক্রয় এবং নিবন্ধনের হারও ঊর্ধ্বমুখী। নিবন্ধিত প্রায় ৩০ লাখ মোটরসাইকেলের মধ্যে ২৫ শতাংশই চলাচল করছে ঢাকায়।

মোটরসাইকেলের বাজার

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৩টিতে। ২০১৭ সালে মোটরসাইকেলের বাজার ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার। সেটি ২০১৯ সালে বেড়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশে সবকটি ব্র্যান্ড মিলে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ইউনিট। ২০১৮ সালে সেই বিক্রি বেড়ে হয় ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ ইউনিট, যা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ ইউনিটে।

দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোটরসাইকেল বর্তমানে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি ও সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোটরসাইকেলকে ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যেতে চায় সরকার। ছবি: সংগৃহীত

এর মধ্যে বাজার অংশীদারত্বের হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের একক অংশীদারত্ব ছিল ৫৩ শতাংশ এবং টিভিএসের ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতীয় ও জাপানি ব্র্যান্ড হিরো হোন্ডার ১৫ শতাংশ এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের ৮ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশের বাজার ছিল দেশীয় ও বিদেশি অন্য ব্র্যান্ডগুলোর। তবে বাজার অংশীদারত্বে ক্রমেই প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকি ও মাহেন্দ্রাও।

আগামীর সম্ভাবনা যেখানে

খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের নীতি-সহায়তার কারণেই মোটরসাইকেল শিল্পে এই বিপ্লব ঘটেছে। তবে উন্নতির এখনও অনেক বাকি। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে প্রতি চারজনে একজন মোটরসাকেল ব্যবহারকারী। ভারতে সেটি প্রতি ২০ জনে একজন। সেদিক থেকে বাংলাদেশ জনবহুল হয়েও মোটরসাইকেল ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে। আর এটাই হলো দেশের মোটরসাইকেলের বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জায়গা। যার ওপর দাঁড়িয়ে আজ দেশে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, আগামীর বাংলাদেশে মোটরসাইকেল শিল্পের সম্ভাবনা বিরাট।

এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের নীতি-সহায়তার কারণেই মোটরসাইকেল শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। খাতটির উন্নয়নে ভবিষ্যতেও প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি জানান, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এ শিল্প খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোরও উদ্যোগ রয়েছে।

লক্ষ্য প্রতি বছর ১০ লাখ ইউনিট উৎপাদন

শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাবি, চাহিদার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশেই উৎপাদন হয়। বাকি ৪০ শতাংশ এখনও আমদানি হয়। তবে সরকারের মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতি ২০১৭ অনুযায়ী, প্রতি বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে মোটরসাইকেল উৎপাদন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে সরকার স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের উৎপাদন বছরে ১০ লাখ ইউনিটে নিয়ে যেতে চায়। এর পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মোটরসাইকেলে বাজার মাত করছে যারা

বর্তমানে ভারতের বাজাজ, টিভিএস ও হিরো, জাপানের হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিদেশি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করেছে। কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশি কোম্পানি, কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ব্র্যান্ডের মূল প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের একক বিনিয়োগের মাধ্যমে রানার, গ্রামীণ মোটরস, লিফান, রোডমাস্টারের মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডও ইতোমধ্যে সুপরিচিত হয়ে গেছে।

পাশাপাশি এসব কোম্পানির মাধ্যমে এ শিল্পের যন্ত্রাংশ তৈরিতে রানার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিটল মেশিনারিজ, কিউভিসিসহ বিভিন্ন সহযোগী শিল্পও গড়ে উঠেছে। বাজারজাতকারী এসব প্রতিষ্ঠান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈশ্বিক সর্বশেষ প্রযুক্তির সমন্বয়ে ক্রেতার রুচি অনুযায়ী সামনে আনছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের নতুন নতুন মডেল, যা বাজারে আসামাত্র লুফে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

যেভাবে দেখছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো

দেশে ভারতের হিরো ও জাপানোর হোন্ডা ব্র্যান্ডের পরিবেশক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নিউজবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মোটরসাইকেলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ, চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা সমান্তরাল বাড়ছে। এখন এটি মোটেও বিলাসপণ্য নয়। বরং দ্রুত সময়ে সবার গন্তব্যে পৌঁছানোর নিরাপদ ও অত্যাবশ্যকীয় বাহন।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের মূল বার্তা হচ্ছে: সরকার স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চায়। সক্ষমতা বাড়াতে চায়। এ ক্ষেত্রে ২৫০ সিসি পর্যন্ত সুরক্ষা শুল্ক বা সম্পূরক শুল্কের উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় কোম্পানিগুলোও যাতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আবার এ পদক্ষেপ নেয়ার আরেকটি সময়োপযোগী উদ্দেশ্য হলো, সারা বিশ্ব এখন অর্থনৈতিকভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানি যতটা সংকুচিত করা যাবে, বৈশ্বিক ঝুঁকি তত কম থাকবে। ফলে রিজার্ভও সুরক্ষিত থাকবে। এখানে পদক্ষেপ একটি, কিন্তু কাজ হয়েছে দুটি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রানার’-এর উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪ অনুযায়ী সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কারখানায় কম্পোনেন্ট কাজে ব্যবহার ছাড়া দেশে ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে কোনো মোটরসাইকেল আমদানি করা যাবে না। তবে শুধু পুলিশ বাহিনীর কাজে ব্যবহার প্রয়োজনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণসাপেক্ষে আমদানি করার সুযোগ রাখা হলেও বাকিদের জন্য তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

‘প্রস্তাবিত বাজেটে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে ২৫০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্কারোপের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি সেই অর্থে কিছু যায় আসে না। কারণ দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার বিষয়টি আমদানিনীতির মাধ্যমেই সুস্পষ্ট করা হয়েছে। রাজস্ব পদক্ষেপের আওতায় কম শুল্কেই উদ্যোক্তারা শিল্পের প্রয়োজনে আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখানে আমদানিকারকদের সঙ্গে দেশীয় শিল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।

‘তবে এটা ঠিক, এখন পর্যন্ত দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের যে অগ্রগতি সেটি সরকারের নীতি-সহায়তার ওপর ভর করেই হয়েছে। সামনে সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে যদি কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং বাংলাদেশে আরও বেশি হয়। এর জন্য স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। যত বেশি উৎপাদন স্থানীয়ভাবে করতে পারব, তত বেশি যন্ত্রাংশ স্থানীয় মার্কেট থেকেই কেনা সম্ভব হবে। তখন প্রতিযোগিতার বাজারে দামও কমে আসবে, যা আমাদের মোটরসাইকেলের বাজারে টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াবে।’

দেশে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরসের অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার ও ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশের হেড অফ মার্কেটিং হুসেইন মোহাম্মদ অপশন বলেন, ‘দেশে এখন ৮০, ১১০, ১২৫, ১৩৫, ১৫০, ১৫৫ ও ১৬০ সিসির গতিবেগসম্পন্ন মোটরসাইকেল বাজারজাত হচ্ছে। এই মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ হয় দীর্ঘমেয়াদি। অথচ কোনো নতুন মডেল কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদনে ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ করতে হয়, তা খুবই ব্যয়বহুল।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোম্পানিগুলোর সেই ব্যয়বহুল বিনিয়োগ সক্ষমতা এখন নেই। তবে সবাই চায় তাদের সক্ষমতাকে আরও ছাড়িয়ে যেতে। নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে। সেই চেষ্টাও হয়তো অনেকে করছে। তবে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা দেয়ার যে চেষ্টা হয়েছে, তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এখনই তার সুফল পাওয়া যাবে না, তবে ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।’

সামনে যত চ্যালেঞ্জ

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরসাইকেল শিল্পের বর্তমানে চার চ্যালেঞ্জ আছে।

প্রথমত, মোটরসাইকেল শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ৭০ শতাংশ এখনও আমদানিনির্ভর। বাকি ৩০ শতাংশ স্থানীয় জোগান আসে। তাই মোটরসাইকেল শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা সহযোগী শিল্প কিংবা ভেন্ডরের উন্নয়ন প্রয়োজন, যারা কারখানার জন্য বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে।

দ্বিতীয়ত, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় হ্রাস।

তৃতীয়ত, সহজ শর্তে ক্রেতাকে মোটরসাইকেল কেনায় ঋণ প্রদান।

চতুর্থত, মোটরসাইকেল চালনার প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা প্রদান।

এ বিভাগের আরো খবর