বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আসছে ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’

  •    
  • ২৭ জুন, ২০২২ ০৮:৫১

লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলা দেশে পেটেন্ট করা প্রথম থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’ আসছে আগামী মাস থেকে। বাঘ মোটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করছে। দাম হবে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

যানবাহনের প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারির মেয়াদকাল ছয় মাস থেকে এক বছর। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে পাঁচ থেকে ছয় বছর। এটি যানবাহন চালানোর খরচ কমিয়ে দেয়। পরিবেশও বাঁচায়।

এমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির থ্রি হুইলার বাজারে আনছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাঘ মোটরস’। আগামী জুলাইয়ে উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি জানান, দেশে এটি হবে প্রথম ইকো থ্রি-হুইলার ট্যাক্সি। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘বাঘ’। গাজীপুরের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে।

জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের তেলের বিকল্প নিয়ে ভাবতেই হবে। শুধু থ্রি-হুইলারই নয়, আগামী তিন বছরে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনও যুক্ত হবে বাঘ মোটরসের বহরে।’

গত মার্চে এ বাহনটিকে চলাচলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। উচ্চ নিরাপত্তা ফিচার, কম খরচ ও উন্নত প্রযুক্তির এই গাড়ির দাম ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাঘ মোটরস জানিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের থ্রি হুইলারে তেমন গরম অনুভূত হয় না।

জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ মোটরস প্রথম কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি নিজস্ব প্যাটেন্ট দিয়ে, নিজস্ব ডিজাইনে নিজস্ব প্রকৌশলে দেশে গাড়ি উৎপাদন করছে। বর্তমানে দেশে অন্যরা যেসব গাড়ি উৎপাদন করছে, সেগুলো প্রযুক্তিসহ সব কিছুই অন্য দেশের। এখানে শুধু উৎপাদন হচ্ছে। আর আমাদের পেটেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজস্ব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এ পরিবহন শতভাগ পরিবেশবান্ধব, কোনো দূষণ নাই, সৌরশক্তিতে চলে, গ্রিন এনার্জি ব্যবহার হয়। এমন হাজারটা কারণ আছে, যাতে মানুষ আমাদের এই বাঘ ইকো মোটরসের ইকো ট্যাক্সি ব্যবহার করবে।’

অ্যাসিড ব্যাটারির কারণে দেশে প্রায় ২ কোটি লিটার অ্যাসিড নির্গত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। ফলে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন উৎসাহিত করার সময় এসেছে।

জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ইকো থ্রি-হুইলারের ডিজাইন-ড্রইং করে পেটেন্ট করেছি। এটা পৃথিবীর প্রথম সোলার ইকো থ্রি-হুইলার, যেটা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে চলে। এটির পারমিশন পেতে আমাদের প্রায় ৩০ মাস সময় লেগেছে।’

এটির দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটা সিএনজি অটোরিকশার দাম এখন প্রায় ১৮ লাখ টাকা, সেখানে আমরা একটা ইকো থ্রি-হুইলার ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় দিচ্ছি। আমাদের একটা ব্যাটারি ৬ বছর পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয় না। প্রচলিত যেসব অ্যাসিড ব্যাটারি আছে, ছয় বছরে সেখানে ১২টি ব্যাটারি প্রয়োজন হয়।’

২০২০ সালের এপ্রিলে বাঘ মোটরস ১১টি যান তৈরি করে। ডুয়াল পাওয়ার-ব্যাটারি এবং সৌরচালিত এ থ্রি-হুইলারে যাত্রীর নিরাপত্তায় বেশ কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে যাত্রীর সিটের সঙ্গে ‘প্যানিক বাটন’ রাখা রয়েছে। এই বাটনে চাপ দিলে গাড়ির গতি মুহূর্তেই ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এরপর ২০ মিনিটের জন্য গাড়িটি অচল হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সতর্কবার্তাও পাঠাবে। এতে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় করতে পারবে।

এতে থাকবে নিরাপত্তা ক্যামেরা, যা একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত থাকবে। সব ধরনের ভিডিও রেকর্ড ও সংরক্ষণ থাকবে সার্ভারে। থাকবে এমবেড করা রিয়াল-টাইম জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, যা থ্রি-হুইলারের রিয়াল-টাইম অবস্থান দেখাবে। চুরি ঠেকাতে থাকবে আলাদা প্রযুক্তিও।

গাড়িগুলোতে উচ্চমানের ইস্পাত ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সাধারণত বাস-কারে ব্যবহৃত হয়।

জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাড়ি শতভাগ মেটাল বডির তৈরি। পুরো বডিই মোটরগাড়ির মতো করে তৈরি, যা যাত্রীকে অধিক নিরাপত্তা দেবে। ব্রেক ও লাইট ছাড়া পুরো গাড়ির দুই বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি থাকবে। গাড়িতে ওয়াইফাই সিস্টেম থাকবে, মোবাইল চার্জিং সিস্টেম থাকবে, জিপিএস থাকবে, মনিটর থাকবে।’

২০২৫ সালের পর বিশ্বে কোনো ডিজেলচালিত গাড়ি তৈরি হবে না। ২০৩০ সাল থেকে তৈরি হবে না কোনো অকটেন গাড়িও। সব গাড়িই বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে পরিণত হবে।

নিজস্ব রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি ট্যাক্সি সার্ভিস হিসেবে কাজ করবে এই ইকো ট্যাক্সি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও এটি কেনা যাবে।

সাধারণ সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার এবং হিউম্যান-হলারের চেয়ে বড় চাকা থাকবে বাঘ ইকো ট্যাক্সিতে। পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম (এবিএস)-সহ একটি হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমও থাকবে। গাড়ির ছাদে থাকবে সোলার প্যানেল। এতে ব্যবহৃত একটি ৪৮০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দিনের বেলায় ৪০ শতাংশ চার্জ হবে ব্যাটারিতে। যার ফলে অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার যেতে পারবে গাড়িটি।

প্রতি কিলোমিটারে এটি চলার খরচ হতে পারে ১ দশমিক ৩৩ টাকার মতো। সম্পূর্ণ চার্জে ১৫০০ ওয়াটের গাড়িটি ৯০ কিলোমিটার চলতে পারে। এতে চালকের দিনে খরচ হবে ১২০ টাকা। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেও চিন্তা নেই। ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে।

বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব চার্জিং পয়েন্টও বসানো হবে। চার্জিং পোর্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-সহ একটি মাইক্রো চিপ ইনস্টল করা থাকবে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পোর্টটি খোলা হবে। গাড়ির মালিক নির্দেশ দিলেই চার্জ শুরু হবে।

এ বিভাগের আরো খবর