বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফের পতনে লেনদেন তলানিতে, দুর্বল কোম্পানির ‘সুদিন’

  •    
  • ২৬ জুন, ২০২২ ১৫:১৬

টানা ষষ্ঠ দিন কমল লেনদেন। সেটি নেমে এলো ছয় শ কোটির নিচে। গত ২৬ মের পর ২০ কর্মদিবসে কখনও এত কম লেনদেন হয়নি। এমন দিনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই লোকসানি।

আবার দরপতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শুরু হলো পুঁজিবাজারে। টানা তিনটি সপ্তাহে এই প্রবণতা দেখা গেল।

এদিন এমন কোনো খাত ছিল না, যেটি দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়নি। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহের মতোই দুর্বল বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে উল্লম্ফন দেখা যায়।

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে কোনোটিই মৌলভিত্তির কোম্পানি নয়। এর মধ্যে ৬টিই লোকসানি কোম্পানি, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কেবল গত বছর নয়, এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

কেবল সবচেয়ে বেশি ১০টি নয়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে-এমন ২০টি কোম্পানির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র।

কেবল সূচকের পতন নয়, টানা ষষ্ঠ দিন কমল লেনদেন। সেটি নেমে এলো ছয় শ কোটির নিচে। গত ২৬ মের পর ২০ কর্মদিবসে কখনও এত কম লেনদেন হয়নি।

৯৪টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৩০টির দর। ৫৭টির দর ছিল অপরিবর্তিত।

চলতি অর্থবছরের শেষ মাসে জুনকে ঘিরে সমন্বয়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংযোজন বিয়োজন করে পাস, মুদ্রানীতিসহ নানা বিষয় বিনিয়োগকারীদের হিসাবনিকাশে। এ কারণে এই মুহূর্তে শেয়ার না কিনে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। যে কারণে লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে।

দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৫৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ৬৮৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

গত ১৬ জুন লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর পুঁজিবাজারে আশার সঞ্চার হলেও এর পরদিন থেকে প্রতিদিনই লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে।

দরপতনের আগের বহুদিনের মতোই শেয়ারদর ও সূচক বেড়েই শুরু হয় দিনের লেনদেন। তবে সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

টানা তিনটি রোববার পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম ১৬ মিনিটে সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকলেও এরপর থেকে কেবলই কমেছে। লেনদেনের গতি শুরু থেকেই ছিল মন্থর। শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে তা।

শেষ পর্যন্ত সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। বেলা শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০১ পয়েন্ট, যা গত ২৬ মের পর সর্বনিম্ন।

সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্ট। সেদিনের পর থেকে বাজার কিছুদিন ছিল চাঙা।

এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বাজেট নিয়ে এখনও নানা আলোচনা চলছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে এখনও অনেক দাবি তোলা হচ্ছে। যার কারণে বাজেটে কী হবে তা নিয়ে একটি অস্থিরতা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে। তারা হয়তো বাজেটে কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে, কোম্পানির আর্থিক বছর শেষের বিষয়টি। জুলাইয়ে শুরু হবে নতুন বছর। কোম্পানিগুলো তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এটার ওপর নির্ভর করে অনেক বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নেবেন যে, পরবর্তীতে কী করবেন।’

দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘কেন এসব শেয়ারের দাম বাড়ে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নিশ্চয় এটা কোনো স্বাভাবিক কারণে বাড়ছে না। কেন বাড়ছে সেটা সবাই জানে, তারপরও মানুষ সেসব শেয়ারই কেনেন।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি

সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের দর। এ নিয়ে টানা চার কর্মদিবস শেয়ারের দর বাড়ল কোম্পানিটির। বৃহস্পতিবার ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় বেচাকেন হয়েছিল, সেটি আজকে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৭০ পয়সায়।

লোকসানের কারণে ২০২১ সালে লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক পর্যন্তও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার হাতবদল হয় ৩০ টাকা ৯০ পয়সায়। সেটি আজ লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়।

এ নিয়ে টানা ১৩ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বাড়ল মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। গত ৮ জুন ১০ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি।

এক যুগেও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে না পারা মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর বেড়েছে দিনের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ২৯ টাকা ১০ পয়সায়।

কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি বা সরকারি বিনিয়োগ নেই। অর্ধেক শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক ও বাকি অর্ধেক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকা প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলসের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৮ টাকা ৩০ পয়সা, সেটি রোববার দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সায়।

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টিই লোকসানি

২২ মে থেকে কোম্পানির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ওই দিন ২৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম মাঝে মধ্যেই ওঠানামা করে যদিও গত দুই বছরে এর লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাস খুব বেশি ভালো নয়। ২০২০ সালে ১ শতাংশ ও ২০২১ সালে মাত্র ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এর পরেই ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমেছে ফু-ওয়াং ফুডসের। ২৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়। কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ খুবই নগণ্য।

ষষ্ঠ স্থানে থাকা সাভার রিফ্যাক্টরিজ লিমিটেডের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের দিন ২১৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি আজ লেনদেন হয়েছে ২৩৪ টাকায়।

১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনোদিন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তারপরেও শেয়ারটির শেয়ারদর প্রায়ই লাফায়।

আরেক লোকসানি মেঘনা পেটের দর ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সায়। বিনিয়োগকারীদের কোনোদিনই লভ্যাংশ দিতে পারেনি ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।

শেয়ারটির দর প্রায়ই ওঠানামা করে। ২৫ মে থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দর। ওই ২২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল।

এ ছাড়া মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, আরামিট সিমেন্ট এবং বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডসের দর ৬ শতাংশের মতো কমে যথাক্রমে ৩০ টাকা, ৩৩ টাকা ৩০ পয়সা এবং ২৩ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। আজ শেয়ারটির দর ১০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমেছে। ৭১ বারে কোম্পানিটির ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা।বিকন ফার্মাসিটিক্যালস তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ২৬০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।

তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা পেপার প্রসেসিংয়ের দর ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ১৭৭ টাকা লেনদেন হয়।

তালিকার শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানি হলো- সোনালী পেপার, এইচ আর টেক্সটাইল, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল, বিডি মনোস্পুল পেপার, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৫ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট কমিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ম্যারিকোর দর ১ দশমিক ৮১ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।

এ ছাড়া লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, বিকন ফার্মা, তিতাস গ্যাস, রবি, পূবালী ব্যাংক, বেক্সিমকো গ্রিণ সুকুক ও পাওয়ার গ্রিডের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ২৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ দর বেড়েছে।

ওয়ালটন হাইটেকের দর শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।

স্কয়ার ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্যাংক এশিয়া, লুব রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর