পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ বিষয়ে উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান এবং এমডিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
উত্তরা ফাইন্যান্স থেকে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ আত্মসাতে অন্যদের সহায়তা ও আর্থিক প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, পরে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) প্রতিবেদনেও উঠে আসে।
চিঠিতে বলা হয়, সিএ ফার্ম রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিতে ঘপা ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতি করায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে ২৩ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উত্তরা ফাইন্যান্সের এমডি এস এম শামসুল আরেফিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উত্তরা ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে।
তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রতি বছর আকর্ষণীয় মুনাফা করে বিনিয়োগকারীদেরকে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসলেও ২০১৯ সালের পর আর লভ্যাংশই ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬৮ পয়সা মুনাফা দেখায়। ওই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ১৯ পয়সা।
এরপর চতুর্থ প্রান্তিক, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোনো হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
অথচ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৯ টাকা ৪৫ পয়সা, আগের বছর ৮ টাকা ২৭ পয়সা, ২০১৭ সালে ৭ টাকা ২৫ পয়সা, তার আগের বছর ৬ টাকা ৬২ পয়সা এবং ২০১৫ সালে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৪১ পয়সা মুনাফা করেছিল।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩ টাকা, পরের বছর ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ টাকা লভ্যাংশ দেয় উত্তরা ফাইন্যান্স।
২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি নগদ দেড় টাকার পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারও দেয়া হয়।
এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে উঠানামা করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক বছরের সর্বনিম্ন দর ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা আর সর্বোচ্চ দর ৫৬ টাকা।
গত ৩১ মের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৪২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩২ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে রয়েছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার।
এছাড়া বাকি ১৭ দশমিক ০৫ শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।