বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্দা পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানির দাপট

  •    
  • ২৩ জুন, ২০২২ ১৫:০৯

গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণার পরের কর্মদিবস ১২ জুন থেকেই টানা দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার। এর মধ্যে দুই সপ্তাহেই শেষ দুই কর্মদিবসে সূচক কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। বাকি তিন দিন করে ছয় দিন পতন হয়েছে সূচকের। এ নিয়ে বাজেট পেশের দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক পড়ল ১৬২ পয়েন্ট।

মন্দা পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দুর্বল কোম্পানির দর। টানা পঞ্চম দিন এই প্রবণতা দেখা গেল পুঁজিবাজারে।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটিই লোকসানি। একটি কোম্পানি এক বছরের বেশি সময় ধরে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়নি। সবশেষ যখন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেই লভ্যাংশ বিতরণ না করায় কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের রবি থেকে প্রতি দিনই একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতি দিনই সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিংহভাগই লোকসানি বা দুর্বল কোম্পানির আধিক্য দেখা গেছে।

গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণার পরের কর্মদিবস ১২ জুন থেকেই টানা দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার। এর মধ্যে দুই সপ্তাহেই শেষ দুই কর্মদিবসে সূচক কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। বাকি তিন দিন করে ছয় দিন পতন হয়েছে সূচকের।

এই নিয়ে বাজেট পেশের দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক পড়ল ১৬২ পয়েন্ট।

চলতি সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে। সপ্তাহের শেষ দিন হাতবদল হয়েছে ৬৮৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ৬৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার হাতবদল হয়েছিল ৮৯৫ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

অথচ আগের সপ্তাহে সূচক বাড়ুক আর কমুক, প্রতি দিনই লেনদেন আগের দিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৬ জুন লেনদেন এক হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা হয়ে যায়।

আগের সপ্তাহের মতোই প্রথম দিন সূচকের পতনের পর শেষ দুই দিন কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। আগের সপ্তাহে প্রথম দিন ১১৮ পয়েন্ট কমার পর শেষ দুই দিনে বেড়েছিল ৬৪ পয়েন্ট।

আর চলতি সপ্তাহে প্রথম তিন দিন ১১৩ পয়েন্ট কমার পর বুধবার ৬ পয়েন্ট এবং পরদিন বাড়ল ৯ পয়েন্ট।

এদিন লেনদেন শুরুর ৩৮ মিনিটের মধ্যে সূচক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে দেখা যায়। এরপর থেকে পতনে সূচক স্থির থাকেনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

টানা তিন কর্মদিবস পরে বুধবার ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে লেনদেন হতে দেখা গিয়েছিল। তবে আজ সূচকে পয়েন্ট যোগ হলেও কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির দর। ১৬২টি কোম্পানির দর কমে লেনদেন হয়েছে। বিপরীতে বেড়েছে ১৪৫টির ও অপরিবর্তিত দামে কেনাবেচা হয়েছে ৭৪ কোম্পানির শেয়ার।

লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের-ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘জুনে বিভিন্ন কোম্পানির হিসাব-বছর শেষ হবে। আর কয়েক দিন পরই ঈদ। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছরই এমনটা দেখা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই থেকে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন কোম্পানির আর্থিক সংগতি বুঝে বিনিয়োগে যাবেন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।’

দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসএমইতেও দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু কোম্পানির দাম হুহু করে বাড়ছে। আর এই দর বেড়ে যাওয়া দেখে মানুষ ঢুকছে। এগুলো কেন বাড়ছে, প্রশ্ন রয়েছে। এগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তো বাড়ে না।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন দর ছিল ২৮ টাকা ১০ পয়সা। সেটি বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সা।

এ নিয়ে টানা ১২ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বাড়ল মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। গত ৮ জুন ১০ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের দর। এ নিয়ে টানা তিন কর্মদিবস শেয়ারের দর বাড়ল। মঙ্গলবার ৩১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। আজকে সেটি হাতবদল হয়েছে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায়।

২০১৬ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে এলেও লোকসানের কারণে ২০২১ সালে লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক পর্যন্তও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।

দর বৃদ্ধির পরের স্থানে রয়েছে থাকা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ধারাবাহিক লোকসান থেকে কিছুটা বের হতে পারলেও কোম্পানিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেও তা বিতরণ করেনি কোম্পানিটি। এখন সব কোম্পানি সরাসরি ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ পাঠালেও সুহৃদ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট পাঠানোর কথা জানায়। কিন্তু সেই ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট বিনিয়োগকারীদের হিসাবে কখনও যায়নি। ২০২০ সালের জন্য এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা বা কোনো হিসাবও প্রকাশ করা হয়নি।

কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৮.৫৭ শতাংশ। এই দর বাড়া শুরু হয়েছে ২৫ মে থেকে। ওই দিন ১৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল, সেটি হয়েছে ২২ টাকা ৮০ পয়সায়।

সমরিতা হসপিটালের দর ৬.৮৬ শতাংশ বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই ৭৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারের দাম কমে মঙ্গলবার ৬৯ টাকা ২০ পয়সায় ঠেকে। সেখান থেকে পর পর দুই দিন বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৪ টাকা ৭০ পয়সায়।

তিতাস গ্যাসের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। আগের দিন ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ার আজ হাতবদল হয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায়।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল কোম্পানির দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে

টানা দুই দিন দর বাড়ল মুনাফায় থাকা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকোর। আগের দিন ৩৬ টাকায় লেনদেন হয়েছিল, সেটি আজ হাতবদল হয়েছে ৩৮ টাকা ১০ পয়সায়।

৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ দর বেড়েছে লোকসানি ও স্বল্প মূলধনি শ্যামপুর সুগার মিলসের। ৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কখনোই লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তাই লেনদেন করছে জেড ক্যাটাগিরতে।

পর পর দুই দিন দর বেড়ে লেনদেন হতে দেখা গেল। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়। সেই দর এখন দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়।

এ ছাড়া ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দর বেড়ে ৫১ টাকা ২০ পয়সা, যদিও কেবল দুটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

লোকসানি অ্যারামিট সিমেন্টের দরও বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ১০ টাকার শেয়ারে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৭ টাকা ৬২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা।

স্বল্প মূলধনি বহুজাতিক কোম্পানি ও বার্জার পেইন্টসের দর ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৭৮৭ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

দর পতনের শীর্ষ ১০

শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমেছে এপেক্স ট্যানারির। বুধবার শেয়ার দর ছিল ১৫০ টাকা ১০ পয়সা। আজ ৩ টাকা বা ১.৯৯ শতাংশ দর কমে লেনদেন হয়েছে ১৪৭ টাকা ১০ পয়সায়।

দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও হাক্কানি পাল্পের দর কমেছে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমেছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের।

ইমাম বাটনের ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বঙ্গজ লিমিটেডের ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, এইচ আর টেক্সটাইলের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ দর কমেছে।

এ ছাড়াও সোনালী পেপার ও ইসলামি ইন্সুরেন্সের দর ১ দশমিক ৯১ শতাংশ করে কমেছে।

সূচক বাড়িয়েছে যারা

সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বার্জার পেইন্টস। এদিন কোম্পানিটির ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ দর বেড়েছে।

তিতাস গ্যাসের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। ডেসকো সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাওয়ার গ্রিড, রেনাটা, ব্র্যাক ব্যাংক, রেকিট বেনকিজার ও ট্রাস্ট ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ পয়েন্ট।

সূচক কমাল যারা

কোনো কোম্পানিই এককভাবে ১ পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমেছে বিকন ফার্মার কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৮ পয়েন্ট কমিয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।

বেক্সিমকো ফার্মার দর শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।

এ ছাড়া বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, আইসিবি, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, যমুনা অয়েল, সোনালী পেপার ও সাইফ পাওয়ারের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর