করোনাভাইরাসের ধাক্কা এখনও অনেকে সামলে উঠতে পারেননি। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ তো পরের কথা, জমানো পুঁজি ভেঙে সংসারের ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করছেন তারা।
মধ্যবিত্ত, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট সবচেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতির এই বেসামাল অবস্থায় জীবন ধারণ করাই দুষ্কর। অনেকেই ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছেন জমানো অর্থ।
এমন বাস্তবতায় সঞ্চয় বেড়েছে বড় আমানতকারীর। করোনার দুই বছরে কোটি টাকার হিসাবে যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় ২১ হাজার অ্যাকাউন্ট।
অর্থনীতিতে যখন সংকট চলে, আয়ের পথ সংকুচিত হয়, তখন এক শ্রেণির মানুষের হাতে অর্থবিত্ত বেড়ে যাওয়া সুখের লক্ষণ নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম চড়া। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেও খরচ বেড়েছে। এতে অনেক মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাজে বৈষম্য থাকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।’
এক বছরে বেড়েছে ৯ হাজারের বেশি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার ২৭২টি। ২০২২ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭টিতে।
সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৯ হাজার ৩২৫টি।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর সময় ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি থাকা অ্যাকাউন্টের (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। সে হিসাবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ২০ হাজার ৯৭২টি।
আমানতের পরিমাণ
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৩। তাদের হিসাবে জমা ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টগুলোতে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশ কোটিপতিদের দখলে।
২০২১ সালের মার্চ শেষে আমানতকারী ছিল ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
কোন অ্যাকাউন্টে কত জমা
মার্চ শেষে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৮১ হাজার ৩৪৪টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।
পাঁচ কোটি এক থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭টি হিসাব। এসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৮১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১০ কোটি ১ থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাব রয়েছে ৩ হাজার ৮৬৫টি। ১৫ কোটি ১ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার ৭৭১টি, ২০ কোটি ১ থেকে ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার ১৫৫টি, ২৫ কোটি ১ থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৮৮৬টি।
এর বাইরে ৩০ কোটি ১ থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৫৮টি এবং ৩৫ কোটি ১ থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ২৯০টি হিসাব রয়েছে।
৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৬৪৪টি। এ সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।