বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ১৮:৫৮

সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১১ মাসে (২০২১-এর ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৬ জুন) ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো কম। তবে তার আগের যেকোনো অর্থবছরের চেয়ে অনেক বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বছরের দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই এই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন তারা।

৯ অথবা ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে এই দুই সপ্তাহে বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিট্যান্সপ্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের ১৬ দিনে (১ থেকে ১৬ জুন) ৯৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯২ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১১ মাসে (২০২১-এর ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৬ জুন) ২ হাজার ১৬ কোটি (২০.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো কম। তবে আগের যেকোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছর বা বছরে আসা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছিল ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিটান্সে হঠাৎ যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তার একটি ভিন্ন পেক্ষাপট ছিল। ওই বছরের পুরোটা সময় কোভিডের কারণে গোটা পৃথিবী বন্ধই ছিল বলা চলে। সে কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোও বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা সব টাকা পাঠিয়েছিলেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সে কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছিল।’

‘আমার বিবেচনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আসলে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে এর চেয়ে বেশি যে রেমিট্যান্স এসেছিল সেটা আসলে হুন্ডি বন্ধ থাকার কারণেই এসেছিল। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি থাকায় এখন আগের মতো অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।

‘এর পরও বিদায়ী অর্থবছরের ১৫ দিন বাকি থাকতেই ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্সকে আমি খুবই ইতিবাচক মনে করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে মাসের বাকি কয়দিনে বেশি বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন প্রবাসীরা। আশা করছি, এপ্রিল মাসের মত জুন মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে। সে হিসাবে অর্থবছর শেষে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২১ বিলিয়নন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ঈদের পরের মাসেও মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা।

প্রতি বছরই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। কিন্তু রোজার ঈদের পর মে মাসে তেমনটি হয়নি।

টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার।

ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

তবে মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে; ১৮৮ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। রোজার ঈদ উৎসব সামনে রেখে এপ্রিলে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরের মাসেও ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমনটিই পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর।

নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসের ১৬ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর