বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেট পাসের আগে পতনের ধারায় পুঁজিবাজার

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ১৫:৪৩

পুঁজিবাজারে সূচক বৃহস্পতিবার যতটুকু বেড়েছিল, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসেই তার চেয়ে বেশি পড়েছে। রোববার ১৯ পয়েন্ট এবং সোমবার ৪৯ পয়েন্ট মিলিয়ে দুই দিনে সূচক কমল ৬৮ পয়েন্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে।

বাজেট ঘোষণার দিন ৯ জুন থেকে পতনের দিকে চলে যাওয়া পুঁজিবাজার বৃহস্পতিবার ৫১ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল, তবে সেই উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হলো না পর পর দুই দিন পতনে।

বৃহস্পতিবার যতটুকু বেড়েছিল, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসেই তার চেয়ে বেশি পড়ল সূচক।

রোববার ১৯ পয়েন্ট এবং সোমবার ৪৯ পয়েন্ট মিলিয়ে দুই দিনে সূচক কমল ৬৮ পয়েন্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ৫১ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পাশাপাশি ২৩ কর্মদিবস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। পরের দিন সেটা কমে চলে আসে ৯০০ কোটির নিচে। সোমবার সেটি আরও কমল। দিনভর লেনদেন হয় ৮২২ কোটি ৩৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখার ইঙ্গিত দেয়ার পর বৃহস্পতিবার উত্থানের সঙ্গে মিল রেখে নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন লেনদেনের শুরুটা ছিল ঝলমলে, তবে দিন শেষ হয়েছে সূচকের ১৯ পয়েন্ট পতনের মধ্য দিয়ে।রোববার ২৮২টি কোম্পানির দর কমেছিল। সোমবার পতনের তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে।

৩২৫ কোম্পানির দর কমে লেনদেন হয়েছে। বিপরীতে ৩৬টির দর বেড়ে ও ১৯টি আগের দিনের দামে হাতবদল হতে দেখা গেছে।

গত বুধবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এক অনুষ্ঠানে জানান, তিনি পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখার পক্ষে।

একই দিন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার অবশ্যই চাঙা হবে।

পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেগুলো এলে একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি।

একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমানকে বদলির খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।

আমিনুর তুমুল আলোচিত ছিলেন এ কারণে যে, তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সব বিষয় দেখভাল করতেন, যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ছিল পুঁজিবাজারে।

কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা ছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল। প্রায়ই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে, যা বাজারের জন্য নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে ধীরগতির পেছনে যেসব কারণ উঠে এসেছিল, তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে মতদ্বৈততার বিষয় দুটি অন্যতম।

পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দুই সংস্থা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে—২০১৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায়ই নানা সময় একক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিয়ে বিএসইসি একাধিকবার প্রকাশ্যেই তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।

পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমিনুর রহমানের ভূমিকা ছিল। বাজার চাঙা করতে সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যেসব প্রস্তাব ও পরামর্শ দেয়া হয়, তার একটি ছিল আমিনুরকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া।

বাজেট ঘোষণার পর টানা তিন কর্মদিবসে ১১৮ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়। পরের দুই দিনে ৬৪ পয়েন্ট উত্থান হওয়ার পর পুঁজিবাজার ভালো যাবে বলে মনে করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা, তবে দুই দিনের পতনে সেই আশা উবে গিয়ে হতাশা ভর করল তাদের মনে।

পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে ব্রোকারেজ হাউস এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ না দেয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচক ধারায় চলে গিয়েছিল। পরে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার পক্ষে কথা বলেন সরকারের মন্ত্রীরা।

‘এ নিয়ে কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা, কিন্তু এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আশায় বাজারে নেতিবাচক একটা প্রভাব রয়েছে।’

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিও বিনিয়োগকারীদের মনে একটা আশঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করেন শহীদুল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটবাসীর ভোগান্তি বিনিয়োগকারীদের মনে দাগ কেটেছে। এই সংকটটা তাদের মনে প্রভাব ফেলছে, যার কারণে বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন না।’

জুনে অনেক কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে। এটি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগ থেকে বিরত রেখেছে জানিয়ে শহীদুল বলেন, ‘সামনে বিপুলসংখ্যক কোম্পানির ক্লোজিং হবে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কারণে অনেকেই বিনিয়োগ আটকে রেখেছেন।’

দর পতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি

দিনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আশেপাশে এক শ’র কাছাকাছি কোম্পানির দর কমেছে।

সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে এশিয়ান টাইগার, সন্ধানী লাইফ, গ্রোথ ফান্ডের ইউনিটের। আগের কার্যদিবসে প্রতি ইউনিটের ক্লোজিং দর ছিল ১০ টাকা। সোমবার লেনদেন শেষে ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৯.৮০ টাকায়। ইউনিট দর ০.২০ টাকা বা ২ শতাংশ কমেছে।

এ ছাড়া ফাস ফাইন্যান্স, কাট্টালি টেক্সটাইল, মুন্নু সিরামিকস, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, কপারটেক, বিডিকম, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, পিপলস ইন্স্যুরেন্স এবং ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দিনের সর্বোচ্চ সীমায়।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

রোববার ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল মেঘনা ইন্স্যুরেন্স। ধারাবাহিকভাবে শেয়ারদর বাড়ছে ৮ জুন থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করা কোম্পানিটির। ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৯১ শতাংশ বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সায়।

এর পরেই দর বৃদ্ধি হয়েছে ফাইন ফুডস লিমিটেডের। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৪.৯৮ শতাংশ। ৪৬ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার।

তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেডের দর ২ টাকা বা ৩.৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল, জেএআই হসপিটাল, দুলামিয়া কটন, হাক্কানি পাল্প, ইমাম বাটন, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ক্রাউন সিমেন্ট।

সূচক কমাল যেসব কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি সূচক কমিয়েছে গ্রামীণফোন। টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিটির দর কমেছে ০.৮৮ শতাংশ, ফলে সূচক কমেছে ৫.৭৮ পয়েন্ট।

এর পরেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেডের দর পতনে সূচক কমেছে ৩.৬ পয়েন্ট। কোম্পানিটি এদিন দর হারিয়েছে ০.৭৭ শতাংশ।

লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ১.৬৯ শতাংশ দর পতনে সূচক কমেছে ২.২১ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, পাওয়ার গ্রিড, আইসিবি, ইস্টার্ন ব্যাংক ও রবির দর পতনে সূচক হ্রাস পেয়েছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক ফেলেছে ২১.৫২ পয়েন্ট।

সূচক বাড়ানোর চেষ্টায় যেসব কোম্পানি

বেক্সিমকো লিমিটেড ১.২৫ পয়েন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক ১.০২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। কোম্পানি দুটির যথাক্রমে ০.৬৫ শতাংশ ও ২.৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে ওই পরিমাণ সূচক বেড়েছে।

এর বাইরে আর কোনো কোম্পানি সূচক এক পয়েন্টও যোগ করতে পারেনি। এ ছাড়া সূচকে সামান্য পয়েন্ট যোগ করেছে জেএমআই হসপিটাল, ব্যাংক এশিয়া, ক্রাউন সিমেন্ট, ওয়ালটন হাইটেক, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার এবং প্রাইম ব্যাংক।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়াতে পেরেছে মাত্র ৪.৭৫ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর