বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যবসা সহজ নাকি কঠিন হলো

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ০৮:২৭

আগের দুবার শর্তহীনভাবে করপোরেট কর ছাড় দেওয়া হলেও এবার কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব শর্ত করপোরেট ব্যবসাকে কঠিন করে তুলবে। বিশেষ করে ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নীতি-সহায়তার মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও সহজ করা, যাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হন উদ্যোক্তারা। কিন্তু কখনও কখনও এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়, ব্যবসা সহজ হওয়ার পরিবর্তে কঠিন হয়ে পড়ে। এমনই কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় করপোরেট কর। এ নিয়ে টানা তিন অর্থবছর এ কর হ্রাস করা হলো। শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত করপোরেট করহার ৩০ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয় নতুন বাজেটে।

এ খবরে প্রথমে ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও পরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে যে আদেশ জারি করা হয়, তাতে বলা আছে, কম হারে করপোরেট করের সুবিধা পেতে হলে শর্ত মানতে হবে। তা না হলে আগের রেটেই কর দিতে হবে।

আগের দুবার শর্তহীনভাবে করপোরেট কর ছাড় দেওয়া হলেও এবার কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

তবে এসব শর্তের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এর মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস লেনদেন’ (নগদ মুদ্রাবিহীন লেনদেন) চালু করতে যাচ্ছে সরকার, যা বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সম্ভব নয়। বাজেটের এ উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া শর্তটি হলো: সব প্রকার প্রাপ্তি ও আয়ের পাশাপাশি ১২ লাখ টাকার বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হতে হবে। যেসব কোম্পানি এই শর্ত মানবে না, কর ছাড়ের সুবিধা পাবে না তারা। কোম্পানি ছোট হোক বা বড়, সবার ক্ষেত্রেই এ শর্ত প্রযোজ্য।

বাজেটে এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে যুক্তি হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনীতিতে নগদ লেনদেনের প্রাধান্য রাজস্ব আহরণের অন্যতম অন্তরায়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে নগদ লেনদেন হ্রাস করা গেলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার।’

তবে এনবিআরের এ যুক্তির সঙ্গে একমত নন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয়। কারণ এখানকার অর্থনীতির ৮৫ শতাংশই ছোট ও মাঝারি, যার বড় একটি অংশ নগদ লেনদেন হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। এদের পক্ষে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেল কিংবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া দেশে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, তা এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। কাজেই বাজেটে দেয়া এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি কার্যকর হলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হবে ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ছোট ও বড় প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ লেনদেনের সীমা এক হতে পারে না। বড় প্রতিষ্ঠানের লেনদেন বেশি হয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ছোট প্রতিষ্ঠানকে যে শর্ত দেয়া হয়েছে, বড় প্রতিষ্ঠানকেও একই শর্ত মানতে হবে; যা অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রুপালী চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটের এ প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে সব লেনদেনকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। যদি তা না করে এটি করা হয়, তা হলে দেশের কোনো কোম্পানি বাঁচবে না। ক্যাশলেস সমাজব্যবস্থা চালু করা এত সহজ নয়।’

মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে ক্যাশলেস বা নোট বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। এবারের বাজেটে সেই পথেই হাঁটার ইঙ্গিত দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, করপোরেট করে ছাড় দিয়েছে ঠিক, ছাড়ের চেয়ে নেয়ার ব্যালেন্সটি অর্থমন্ত্রীর পক্ষেই বেশি যাচ্ছে।

নতুন বাজেটে আরেকটি পদক্ষেপের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী, যা কার্যকর হলে ব্যবসায়ীরা আরও হয়রানির স্বীকার হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, বকেয়া আয়কর পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হবে।

এটিরও তীব্র সমালোচনা উঠে এসেছে দেশীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা মহল থেকে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘করোপোরেট ট্যাক্স রেট কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা একদম ধোঁকাবাজি। এটি কার্যকর হলে কোম্পানি কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

তিনি মনে করেন, কর বিভাগ এখনও স্বচ্ছ নয়। ‘আন্ডারহ্যান্ড’ লেনদেন ছাড়া ব্যবসা করা যায় না। এসব কাজে তো বিল-ভাউচার থাকে না। তা হলে এসব খরচ ব্যাংকিং চ্যানেলে কীভাবে দেখাবে ব্যবসায়ীরা? করপোরেট কর কমলে কোম্পানির কোনো লাভ হবে না। বরং ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কঠিন হবে।গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো আইন হতে পারে না। ১০০ জনের মধ্যে ২ জন যদি ডিফল্টার হয়, সেটাকে খারাপ বলা যায় না।

স্নেহাশীষ বড়ুয়া (এফসিএ) বলেন, ‘আমাদের দেশে লেনদেন এখনও বেশির ভাগ অনানুষ্ঠানিক বা ইনফরমাল। বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হয়তো ব্যাংকের মাধ্যমে ছোট কিছু লেনদেন করা সম্ভব। কিন্তু ছোটরা (বিজনেস টু কাস্টমার) নগদ লেনদেনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ সব টাকা ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবে না তারা।’

দেশে ডিজিটালাইজড লেনদেনের অবকাঠামো পুরোপুরি গড়ে না ওঠায় বাজেটের এই উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয় বলে জানান তিনি। তবে কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে আইনের বর্তমান যে বিধান আছে, তা সঠিকভাবে প্রতিপালন করলে প্রস্তাবিত নিয়মের দরকার নেই বলে তিনি মনে করেন।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ‘যে কোম্পানির বার্ষিক লেনদেন বা টার্নওভার ৩ হাজার কোটি টাকা, তার জন্য যে নিয়ম, আবার যে কোম্পানির ৩ কোটি টাকা, তার জন্যও একই নিয়ম– এটা ঠিক নয়।’

এটি বৈষম্যমূলক কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি ভালো। তবে এখনই প্রয়োগ করা উচিত হবে না। সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে কৌশল নিতে হবে। লেনদেনের সীমা বাড়িয়ে ধাপে ধাপে সব লেনদেন ক্যাশলেস করা দরকার, যাতে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে আসে। ফলে কর আহরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে।’

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সামস মাহমুদ বলেন, ‘বাজেটে কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকার যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা কোনোমতেই মানা সম্ভব নয়। দেশে অনেক সাপ্লায়ার রয়েছে। তারা সাধারণত ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করে না। কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যাংকে এই লেনদেন করতে চায় না। কাজেই ক্যাশলেস লেনদেন চালুর জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা কার্যকর করা কঠিন হবে।

এ বিভাগের আরো খবর