বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৪ লাখ কোটি টাকা কর আদায়ও সম্ভব: বিসিআই

  •    
  • ১৮ জুন, ২০২২ ১৮:২৩

কর আদায় ব্যবস্থা সহজ ও যুক্তিযুক্ত হলে এই বছরই করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ থেকে দেড় কোটিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এটা করা গেলে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নয়, ৪ লাখ কোটি টাকার বেশিও আদায় করা সম্ভব।

সবাই যাতে কর দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে-এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডস্ট্রিজ (বিসিআই)।

ব্যবসায়ী সংগঠনটি বলেছে, রাজস্ব আহরণে বর্তমান ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক এবং জটিল পদ্ধতির কারণে করদাতারা যেমন হয়রানি বোধ করছেন, তেমনি নতুন করে সহজে কেউ কর দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। মনে রাখতে হবে জোর, ভয় দেখিয়ে কখনও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কর আদায় ব্যবস্থা সহজ ও যুক্তিযুক্ত হলে এই বছরই করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ থেকে দেড় কোটিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এটা করা গেলে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নয়, ৪ লাখ কোটি টাকার বেশিও আদায় করা সম্ভব। যা বাজেট ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেছেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

তিনি বলেন, ‘পুরনো উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবোণতা থাকলেও, নতুনরা কর দিতে চান। হয়রানি ও জটিলতা কমানো গেলে তারা একটি পয়সাও কর ফাঁকি দেবে না। এনবিআরের কাছে অনুরোধ, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।’

‘নতুন করদাতাদের প্রতি এনবিআরের আগ্রহ কম। যারা কর দিচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি কর কিভাবে আদায় করা যায়-সেটা নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত থাকে।’

পারভেজ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টা ও অধ্যবসায় এবং মেধার বলে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে শুধু স্বীকৃতিই অর্জন করেনি বরং এক মিরাকল ন্যাশন (অলৌকিক জাতি) হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও শিল্প বিকাশের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধিই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভূমিকায় আসতে হবে। এদের অবদান ৬০-৬৫ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলেই দেশের ভিত আরও মজবুত হবে। এ জন্য অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সরকার অবশ্য অনেক খানি এগিয়ে গেছে। এখন দরকার পেশাগত ও দক্ষতা উন্নয়ন।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তাতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

৩০ জুন এই বাজেট পাশ হবে। প্রথা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বাজেটে সংযোজন-বিয়োজনসহ বাজেট পাশ হয়। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন অর্থবছর।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বর্তমান করোনা ও ইউক্রেন সংকটের বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কল্যাণমূখী বাজেট দেয়ার চেষ্টা করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।

‘বিশ্ব অর্থনীতি করোনা ও ইউক্রেন সংকটে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশকি ৬ শতাংশ আটকে রাখার বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই কঠিন সময়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং যথাযথ পরিকল্পনা নিশ্চিত করা না গেলে বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে।’

পারভেজ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হলেও তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য রেশনিং ব্যবস্থা জোরদার করার প্রস্তাব করছি।’

‘আবার বাজেটের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এতে শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে বলে মনে করি।

‘বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন বর্তমান সংকটময় বিশ্ব অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে আমাদের মত আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের ন্যায় সব ধরনের রপ্তানিমুখী কোম্পানির করহারও ১২ শতাংশ করা হয়েছে, যা বিসিআই এর দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। এজন্য আমরা মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

‘তবে রপ্তানি ক্ষেত্রে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রনোদনা প্রদানকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে ডলারের মূল্য অবমূল্যায়ন করে প্রবাসী আয়কে আরো উৎসাহিত করা জরুরি।’

মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেনির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করে বাজেট পাশ করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বিসিআই সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে পারভেজ বলেন, ‘প্রাক-বাজেট আলোচনায় আমরা বিসিআই’র পক্ষ থেকে কর ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব বাজেট রাখার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করেছিলাম। অর্থবিল ২০২২-এ সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় তো নেওয়াই হয় নি বরং আরও বিভিন্ন নীতিমালা দিয়ে কর ব্যবস্থাকে আরো জটিল করা হয়েছে।’

‘প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সে সুবিধা কার্যকর হবে না যদি কোম্পানি দুটি শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়। প্রথম শর্ত-সকল প্রকার প্রাপ্তি ও আয় অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত-১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে।

‘শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী ওয়ার্কার প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) ব্যবসায়ী খরচ হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে না এবং আয়কর আইনে ৩০ ধারা অনুসারে সাধারণ হারে কর ধার্য করা হবে। এমনকি কোন রপ্তানিমুখী শিল্পে যার কর্পোরেট কর হার ১২ শতাংশ, তার ক্ষেত্রেও ডব্লিউপিপিএফ তে অননুমোদিত অনুদান এর উপর ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।’

রাজধানীর মতিঝিলে বিসিআই সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বিসিআই’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বিসিআই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্ত্তী এবং মেট্টোপলিটন চেম্বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এ বিভাগের আরো খবর