শুধু বৈধ টাকাই নয়, সুইস ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থের বড় অংশই অবৈধ উপায়ে অর্জিত। শুধু সুইস ব্যাংকে নয়, অন্য দেশেও টাকা চলে যায়। পাচারের বিষয়টি বাজেটেও স্বীকার করা হয়েছে। এ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সুবিধা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ রাখার তথ্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে কার বা কোন প্রতিষ্ঠানের টাকা সে বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে তথ্য চাইতে পারে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেকে দেশে অবৈধ উপায়ে টাকা আয় করে বিদেশে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো অর্থ স্থানান্তর হলে তা ধরতে পারা সম্ভব। কিন্তু বিকল্প কোনো চ্যানেলে দেশ থেকে টাকা চলে গেলে তার খবর বাংলাদেশ ব্যাংকের জানা কঠিন।
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ১২ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করেছেন বাংলাদেশিরা। সব মিলিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২১’ শিরোনামে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য উঠে এসেছে।
মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল আমিন আরও বলেন, ‘টাকা পাচার হয়, বাজেটে এটা স্বীকৃত। পাচার নিয়ে কোনো বিতর্ক হবার কথা না। কিন্তু সব টাকা বাংলাদেশ থেকে নাও যেতে পারে। অন্য দেশে থাকা বাংলাদেশিরাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখতে পারেন।
‘অন্য অনেক প্রতিবেদনেও এসেছে, বাংলাদেশিদের অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে গেছে। এটা বিশ্বাস করতে হবে সুইস ব্যাংকে পাচার করা টাকা আছে। দুর্নীতিবাজ আমলা, অসৎ ব্যবসায়ীদের টাকা আছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই তথ্য চাওয়া উচিৎ। তবে সব টাকাই কিন্তু পাচার করা টাকা নয়। অনিবাসী বা দেশের টাকাও থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে টাকা রাখা হয়ত অনেকে নিরাপদ মনে করে না। ট্যাক্স বা আইনি ঝামেলা, জবাবদিহিতা এড়াতে, অবৈধভাবে আয় করা টাকা ট্যাক্সের আওতায় না আনা বিভিন্ন কারণে বাইরে টাকা পাচার করে। যারা টাকা পাঠান, তাদের নাম-পরিচয় জানা যায় না, এটা তাদের জন্য বড় সুবিধা। এসব সুবিধার জন্য তারা বিদেশে টাকা রাখেন। যেখানে অবৈধ টাকা আয়ের সুযোগ আছে, সেখান থেকেই টাকা চলে যাবার কথা আসে।’
সুইস ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ ও গোপন এজন্য ওখানে টাকার পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করেন নুরুল আমিন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবার বাজেটে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেয়া হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে কেউ টাকা দেশে ফেরত আনবে না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেল তদারকি করা হয়। কিন্তু সবই ব্যাংকিং চ্যানেলে হয় না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি এবং রপ্তানির আড়ালে দেশ থেকে অর্থ পাচার হলে তা খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হলে সেই লেনদেন স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি ওই ব্যাংককে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়।’
সুইস ব্যাংকে অর্থের পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কীভাবে, কোন চ্যানেলে এই অর্থ চলে গেছে তা খতিয়ে দেখবে বিএফআইইউ।’