আগের দিন ২৯ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে যে শেয়ারের, সেই কোম্পানির চার লাখেরও বেশি শেয়ার ৩ টাকায় হাতবদলের ঘটনায় তোলপাড়ের পর এই লেনদেন বাতিল হয়েছে।
সাধারণ বিমা খাতের এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের এই লেনদেনে কারসাজি হয়েছে কি না, সেটি আলোচনা ওঠার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই কর্তৃপক্ষ সেই লেনদেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘এই লেনদেনটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়েছে।’
তবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানায়নি।
বুধবার এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ২৯ টাকা ১০ পয়সায়। বিকেলে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারপ্রতি ১০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
বৃহস্পতিবার সেই করপোরেট ঘোষণা আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি হিসেবে আসে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে। ফলে সেদিন শেয়ারদর বৃদ্ধি বা হ্রাসে কোনো সীমা ছিল না। এ কারণে যেকোনো দরে শেয়ার লেনদেনের সুযোগ ছিল।
এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে প্রথমে ৩০ হাজার ৯৮৪টি এবং পরে আরও চারবারে ৯৯ হাজার ৯৯৯ করে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮০টি শেয়ার ৩ টাকায় হাতবদল হয়।
তবে এর পরই আবার দর উঠে যায়। বেলা শেষে আগের দিনের দরের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে ৩২ টাকা ১০ পয়সায় শেষ হয় লেনদেন।
সারা দিনে কোম্পানিটির ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক দরে হাতবদল হয়েছে ওই ৪ লাখ ৩১ হাজারের মতোই।
লেনদেনের ৩৩ সেকেন্ডে ২৯ টাকা থেকে নেমে ৩ টাকায় চার লাখের বেশি শেয়ার লেনদেনকে অস্বাভাবিক বলে মত দেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি করেন।
প্রাথমিক তথ্য বলছে, অস্বাভাবিক দরে শেয়ারগুলো ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজের নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে ব্যক্তি পোর্টফোলিওতে স্থানান্তর হয়েছে। শেয়ারগুলো কেনা হয় লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এক নারী গ্রাহকের বিও হিসাব থেকে।
এটি কারসাজি নাকি ভুল, সে বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজও কিছু বলেনি।
এই লেনদেন হওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসই সেটি খতিয়ে দেখবে বলে জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৩ টাকায় যতগুলো লেনদেন হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। কারণ লেনদেনগুলো আনইউজুয়াল মনে হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করবে ডিএসই।’
লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম খুঁজে পেলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ডিএসই তদন্ত করবে। প্রয়োজন হলে কমিশন থেকেও তদন্ত হতে পারে। কী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে।’
বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে প্রশ্ন রাখা হলে সংস্থাটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটা খতিয়ে দেখা হবে এবং পরবর্তী সময়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা আয় হয়েছিল।
একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো রয়েছে ১ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ৫২ পয়সা ছিল। অন্যদিকে গত ৩১ মার্চে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭ টাকা ৭৪ পয়সা।
বিমা খাতের এ কোম্পানিটি ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।
এবার ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ায় কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে যাবে। গত এক বছরে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে। ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রথম দিনই দাম হয় ১৫ টাকা। কিন্তু এই দরে বিক্রেতা ছিল না বললেই চলে। ২৭ আগস্ট ২৬ টাকায় প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়। সেদিন হাতবদল হয় ৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৭টি।