বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই কর

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২২ ০৮:৪৬

নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলেই তাকে কর দিতে হয়। এই নিয়ম মেনে যারা করের আওতায় পড়েন, তাদের সবাইকে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন অবশ্যই জমা দিতে হয় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে।

মনির হোসেন দশম গ্রেডের একজন সরকারি চাকরিজীবী। ‍সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন তিনি।

সবশেষ স্কেল অনুযায়ী তার মূল বেতন বা বেসিক ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে পান বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের পঞ্চাশ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা। ফলে মনির হোসনের মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে ২৭ হাজার ৭৫ টাকা।

প্রশ্ন হচ্ছে, মনির হোসেনকে কি আয়কর দিতে হবে? উত্তর, হ্যাঁ। এখন যে আইন আছে, তাতে মনির হোসেন উল্লিখিত আয়ের জন্য করের আওতায় পড়ে গেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলেই তাকে কর দিতে হয়।

এই নিয়ম মেনে যারা করের আওতায় পড়েন, তাদের সবাইকে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন অবশ্যই জমা দিতে হয় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। তার সঙ্গে হিসাব করে কর পরিশোধ করতে হয়।

এখানে মনে রাখতে হবে, রিটার্ন দাখিল আর কর পরিশোধ দুটি এক নয়। কোনো ব্যক্তির আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে, তা হলে কর দিতে হবে না। শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে, তাহলেই তাকে কর পরিশোধ করতে হবে।

এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হলো, রাজস্ব আদায় করা হয় করযোগ্য আয় থেকে। কারণ, আয়ের ওপর নানাভাবে রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যায়। এসব সুবিধা বাদ দিয়ে ‘করযোগ্য’ আয় হিসাব করা হয়।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, বেশ কিছু আয় করের আওতায় পড়ে। যেমন: চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়ি ভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোনো সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরের ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ, কৃষি থেকে আয়। এগুলো হলো একজন ব্যক্তির আয়ের উৎস।

এসব আয়ের বিপরীতে নানাভাবে রেয়াত গ্রহণের সুবিধা আছে করদাতাদের জন্য। যেমন: কেউ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে রেয়াত পাবেন। আবার সরকারি অনুমোদিত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে রেয়াত পাওয়া যায়।

কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করলে রেয়াত বা কর ছাড় পাওয়া যায়, তার তালিকা আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। যেকোনো ট্যাক্স কনসালট্যান্টের কাছেও এটি পাওয়া যায়। সাধারণত রেয়াত পাওয়ার জন্য ওই সব খাতে বিনিয়োগ করেন করদাতারা।

করদাতার আয় থেকে রেয়াত সুবিধা বাদ দেয়া হয়। অবশিষ্ট যা থাকে, তার ওপর কর ধার্য করা হয়।

সরকারি চাকরিজীবী মনির হোসেনের কথাই ধরা যাক। তিনি একজন সাধারণ বা প্রান্তিক করদাতা। বেতন ছাড়া তার আর কোনো আয় নেই। তিনি কত টাকা সরকারকে কর পরিশোধ করবেন?

অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী, মনির হোসেনের সর্বসাকুল্যে মাসিক বেতন ২৭ হাজার ৭৫ টাকা। সে হিসাবে বছরে তার মোট আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। ফলে আইন অনুযায়ী, তিনি করের আওতায় পড়ে গেছেন। এখন দেখা যাক, মনির হোসেনের কত টাকা কর আসে।

মূল বেতনের পঞ্চাশ শতাংশ হিসেবে মনির হোসেন বাড়ি ভাড়া পান মাসে ৯ হাজার ৭৩ টাকা। এ হিসাবে বছরে ভাড়া পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯০০ টাকা।

আয়কর আইন অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের পঞ্চাশ শতাংশের সমপরিমাণ টাকা, চিকিৎসাভাতা এককালীন ২০ হাজার টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ৩০ হাজার টাকা রেয়াত পাওয়া যায়।

মূল বেতন এবং বোনাসের পুরোটাই করযোগ্য আয় হিসেবে আইনে ধরা হয়।

মূল বেতন অনুযায়ী, মনির হোসেনের বছরে করযোগ্য আয় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। দুই ঈদে দুটি বোনাসসহ পান ৩১ হাজার টাকা। ফলে তার মোট করযোগ্য আয় ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা ভাতা বাদ যাবে। ফলে তার নিট করযোগ্য আয় দাঁড়াবে ৭২ হাজার টাকা (২ লাখ ৩১ হাজার টাকা বিয়োগ ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা)। যার ওপর কর ধার্য হবে।

মনির হোসেন একজন প্রান্তিক বা সাধারণ করদাতা। আয় অনুযায়ী, তার করহার ৫ শতাংশ। ফল তিনি কর পরিশোধ করবেন ৩ হাজার ৬০০ টাকা।

যদি মনির হোসেনের কোনো বিনিয়োগ না থাকে তা হলে এই পরিমাণ করের টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। আর যদি বিনিয়োগ থাকে, তা হলে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করে রেয়াত নিতে পারবেন। এতে করের পরিমাণ আরও কমে আসবে।

বর্তমানে বার্ষিক করমুক্ত আয়ের যে সীমা আছে, তাতে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তির মাসে আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই করের আওতায় পড়েন তিনি।

এখন প্রশ্ন উঠেছে বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা ভাতাসহ জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে হুহু করে বাড়ছে, তাতে করে কোনো পরিবারের পক্ষে কি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব, বিশেষ করে ঢাকা শহরে?

অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে ব্যক্তি কর কাঠামোর কোনো সামঞ্জস্য নেই। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যক্তিশ্রেণি করমুক্ত আয়ের সীমা কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।

সবাই আশা করেছিল, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে ছাড় দিয়ে করদাতাদের স্বস্তি দেবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু সবাইকে হতাশ করেছেন তিনি। ব্যক্তি করে ছাড় অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভুইয়া মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে: পাঁচ বছর পর পর সরকারের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করার কথা। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকর করা হয় সাত বছর আগে। এরপর আর বেতন বাড়ানো হয়নি। যে বেতন দেয়া হচ্ছে, তা দিয়ে বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা চলতে পারে না।’

বর্তমানে জনপ্রশাসনে ১৪ লাখের মতো সরকারি চাকরিজীবী আছেন। এর মধ্যে কর্মচারী ১০ লাখ।

এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, বর্তমান কর আইনটি প্রগেসিভ। যার যত বেশি আয়, তিনি তত বেশি কর দেবেন।

এখন ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে করহার শূন্য। পরবর্তী এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট টাকার ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়।

এনবিআর বলেছে, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতার বাইরে প্রভিডেন্ড ফান্ড, বিনোদন ভাতা, বাৎসরিক ছুটির সাথে প্রাপ্য ভাতা, ওভার টাইম, সুদ আয় ইত্যাদি করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

আইনে বলা আছে, করদাতার আয় অনুযায়ী হিসাব করার পর যদি দেখা যায়, আয়করের পরিমাণ ন্যূনতমের চেয়ে কম এসেছে, তা হলে ন্যূনতম কর দিতে হবে।

ন্যূনতম করের পরিমাণ ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বসবাসরত করদাতাদের জন্য ৫ হাজার টাকা। এই দুটি সিটি করপোরেশনের বাইরে হলে ৪ হাজার টাকা এবং জেলা শহরগুলোতে ৩ হাজার টাকা।

আয়করের পাশাপাশি নিট সম্পদের জন্য বাড়তি কর হিসেবে সারচার্জও দিতে হয়। কোনো করদাতার আয়ের পাশাপাশি ৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে তার জন্য প্রযোজ্য হারে আয়করের সঙ্গে অতিরিক্ত সারচার্জ পরিশোধ করতে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর