বুধবার ২৯ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বৃহস্পতিবার এক লাফে ৩ টাকায় নেমে আসা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে পুঁজিবাজারে।
এই সর্বনিম্ন দরে চার লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বাজারে লেনদেন শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এই শেয়ারের হাতবদলের পেছনে কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার ২০২১ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানির করপোরেট ঘোষণা অনুযায়ী, লভ্যাংশ ঘোষণার পরের দিন শেয়ারের দর বৃদ্ধি বা কমার ক্ষেত্রে কোনো সীমা থাকে না।
কোনো সার্কিট ব্রেকার না থাকায় যেকোনো দরে লেনদেন হতে পারত। লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে প্রথমে ৩০ হাজার ৯৮৪টি এবং পরে আরও চারবারে ৯৯ হাজার ৯৯৯ করে শেয়ার ৩ টাকায় হাতবদল হয়।
সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮০টি শেয়ার হাতবদলের পরেই আবার দামে উঠে যায়। বেলা শেষে আগের দিনের দরের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে ৩২ টাকা ১০ পয়সায় শেষ হয় লেনদেন।
সারা দিনে কোম্পানিটির ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক দরে হাতবদল হয়েছে ওই ৪ লাখ ৩১ হাজারের মতোই।
প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, অস্বাভাবিক দরে শেয়ারগুলো ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ইন্স্যুরেন্সের নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে ব্যক্তি পোর্টফোলিওতে স্থানান্তর হয়েছে। ফারইস্ট লাইফ শেয়ার বিক্রি করে আর লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এক নারী গ্রাহকের বিও হিসাব থেকে কেনা হয়।
একটি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে ব্যক্তির পোর্টফোলিওতে লেনদেন শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এতগুলো শেয়ার স্থানান্তরকে নিয়ে প্র্রশ্ন তুলেছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা। কোনো ব্যক্তির বিশেষ সুবিধার জন্য উভয় পক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই কারসাজি সংঘটিত করেছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন তারা।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘এমন লেনদেন হয়ে থাকলে তা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। ম্যানুপুলেশন প্রমাণিত হলে পুঁজিবাজারের স্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটা খতিয়ে দেখা হবে এবং পরবর্তী সময়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা আয় হয়েছিল।
একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো রয়েছে ১ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ৫২ পয়সা ছিল। অন্যদিকে গত ৩১ মার্চে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭ টাকা ৭৪ পয়সা।
বিমা খাতের এ কোম্পানিটি ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।
এবার ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ায় কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে যাবে। গত এক বছরে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে। ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রথম দিনই দাম হয় ১৫ টাকা। কিন্তু এই দরে বিক্রেতা ছিল না বললেই চলে। ২৭ আগস্ট ২৬ টাকায় প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়। সেদিন হাতবদল হয় ৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৭টি।