বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কালো টাকা নিয়ে আশ্বাসের পর পুঁজিবাজারে উত্থান

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২২ ১৪:৫১

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, কালো টাকা নামে পরিচিতি পাওয়া অপ্রদর্শিত আয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। তবে বুধবার এক আলোচনায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ইঙ্গিত দেন।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়ার পর উত্থান দেখল বিনিয়োগকারীরা।

৫১ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পাশাপাশি ২৩ কর্মদিবস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার গণ্ডি ছাড়াল। এ নিয়ে পর পর দুই দিন বাড়ল সূচক। লেনদেন পর পর চার দিন বাড়ল।

গত সপ্তাহে একটু একটু করে বাড়তে থাকা পুঁজিবাজার গত বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার আগে আগে স্লথ হয়ে যায়। বিশ্লেষকরা সেদিন বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য কী ঘোষণা আসে সেটা দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন বিনিয়োগকারীরা।

এবার বাজেটে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর করপোরেট করের হার আড়াই শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এটিকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, কালো টাকা নামে পরিচিতি পাওয়া অপ্রদর্শিত আয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। পুজিবাজারে লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত করও প্রত্যাহার হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আগের মতোই ৩৭.৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।

বাজেট প্রতিক্রিয়া শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব রেখেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ।

বাজের প্রস্তাবের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে সূচক কমে যায় ১১৮ পয়েন্ট। তবে বুধবার ১৩ পয়েন্ট বেড়ে চাপ কাটার ইঙ্গিত মেলে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

একই দিন পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম দুটি মন্তব্য করেন।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ তারা দিয়েছেন, সেই টাকার একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

বাজেটে আরও যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোও বাজারকে চাঙা করবে বলে আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলে পুঁজিবাজারে তার প্রভাব পড়বে এবং বাজারে চাঙাভাব বিরাজ করবে। আমাদের দেশের অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে। প্রবৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে। সারা বিশ্বের তুলনায় আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার শক্তিশালী অবস্থানে। কাজেই পুঁজিবাজার ভালোভাবে চলবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, বাজেট পাসের সময় কালোটাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হতে পারে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম-সিএমজেএফের এক আয়োজনে তিনি পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে বলেন, ‘এই সুযোগ দেয়া হলে একদিকে কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হব, অন্যদিকে তা পুঁজিবাজারকে গতিশীল হতে সাহায্য করবে। কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে থাকলে তা নানা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়।’

মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের এই বক্তব্যের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। সময় যত গড়িয়েছে, সূচক বেড়েছে তত বেশি।

শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫১ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট। এ নিয়ে বাজেট পেশের পর তিন দিনে হারিয়ে ফেলা ১১৮ পয়েন্টের মধ্যে দুই দিনে উদ্ধার হলো ৬৪ পয়েন্ট।

বেড়েছে ১৯৮টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৩৫টির আর অপরিবর্তিত থাকে ৪৮টির দর। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা।

এর আগে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল ২৩ কর্মদিবস আগে গত ১৬ মে। সেদিন হাতবদল হয় ১ হাজার ৩৪ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও মনে করেন, বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না রাখায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। যার প্রভাব পুঁজিবাজারে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, ‘গতকাল সিএমজেএফের প্রোগ্রামে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন বাজেট পাসের সময় কালোটাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হতে পারে। আশা জাগানিয়া এই খবরে বিনিয়োগকারীরা একটু সক্রিয় হয়েছে তা বলা যায়।’

তবে ধারাবাহিক পতনের পরে উত্থান বাজারে স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন রিচার্ড ডি রোজারিও। বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পতনের ফলে বাজার যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য। কারণ যে অবস্থানে চলে গেছে, সেটা বায়িং পজিশন।’

সূচক বাড়াল যারা

সবচেয়ে বেশি যে দুটি কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে তার দুটিই বেক্সিমকো গ্রুপের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এদিন কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪.৩২ শতাংশ, যার কারণে সূচক বেড়েছে ৫.৪৩ পয়েন্ট।

অন্যদিকে বেক্সিমকো লিমিটেড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.১৮ পয়েন্ট যোগ করেছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২.৫১ শতাংশ।

এরপরেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সূচক বাড়িয়েছে ৩.৮৭ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানিটির দর ০.৭৩ শতাংশ বাড়ার কারণে ওই পরিমাণ সূচক বেড়েছে।

স্কয়ার ফার্মার দর ১.১৩ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৮১ পয়েন্ট। আর সাইফ পাওয়ারের ৯.১৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ১.৯৭ পয়েন্ট।

এছাড়া রেনাটা ১.৫৭ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ ১.৪৬ পয়েন্ট, গ্রামীণফোন ১.৪৫ পয়েন্ট, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১.২৬ পয়েন্ট এবং রেকিট বেনকিসার ১.২৪ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৭.২৪ পয়েন্ট।

বিপরীতে সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের দর পতনে। প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে ১.৯২ শতাংশ। এতে করে সূচক হ্রাস পেয়েছে ২.১৪ পয়েন্ট।

আর কোনো কোম্পানি ১ পয়েন্টের বেশি সূচক কমাতে পারেনি।

এরপরেই মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১.৬৬ শতাংশ মূল্য হ্রাসে সূচক পড়েছে ০.৪৪ পয়েন্ট। আর এনভয় টেক্সটাইলের দর ১.৯১ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে ০.২৭ পয়েন্ট।

এছাড়া সোনালী পেপার, শাইনপুকুর সিরামিকস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, ব্যাংক এশিয়া ও জেএমআই হসপিটালসের দর পতনে সামান্য পরিমাণে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক ফেলেছে ৪.৪৫ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

ধারাবাহিকভাবে দর বাড়ছে ইন্স্যুরেন্স খাতের কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয়েছে ৮ জুন। ৯.৬৫ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির। ১৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে আজ।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মুন্নু ফেব্রিকসের দর বাড়ছে লাগাতার। নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে না পারার পর ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয় কোম্পানিটিকে। গত বছর ফেরে সেখান থেকে। কিন্তু নগণ্য পরিমাণ মুনাফার পর কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ এসেছে শেয়ারে ১০ পয়সা।

আজ ৯.৩৬ শতাংশ দর বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে হাতবদল হয়েছে ২৯ টাকা ২০ পয়সায়।

এরপরেই ৯.১৪ শতাংশ দর বেড়ে ৩৪ টাকা ৬০ পয়সায় বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক।

বিচ হ্যাচারির দর ৭.৬৩ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, জুট স্পিনার্স, ডমিনেজ স্টিল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকস এবং বেক্সিমকো ফার্মা ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষ দশের প্রায় সবগুলোই দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি। সবগুলোর দরই কমেছে সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আশেপাশে।

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের। কয়েক বছর থেকে বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে দেখা গেছে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১.৯৭ শতাংশ।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর কমেছে ১.৯৬ শতাংশ। স্বল্প মূলধনি এই কোম্পানিটির লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাস ভালো নয়। তার পরেও প্রায়ই এর দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।

একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মেঘনা পেটের দর ১.৯৫ শতাংশ কমে ৩০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিন প্রতিটি শেয়ার বেচাকেনা হয় ৩০ টাকা ৭০ পয়সায়।

নাহি অ্যালুমিনিয়াম, শাইনপুকুর সিরামিকস, নিউলাইন ক্লোথিং, জেমিনি সি ফুড, মিথুন নিটিং, ফু-ওয়াং সিরামিকস এবং বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দরও কমেছে এক দিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই।

এ বিভাগের আরো খবর