বাংলাদেশে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদার পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ পাবেন না।
তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন আইন লঙ্ঘনসহ অন্যান্য দুর্নীতির মামলা থাকায় প্রস্তাবিত সুযোগটি তিনি নিতে পারবেন না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্ধারিত হারে কর দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমা করে দেয়ার পথ সুগম হবে।
পাচারের টাকা বৈধ করার এ সুযোগকে অনেকে সমালোচনা করছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা করে প্রকারান্তে পাচারকারীদের পুরস্কৃত করল সরকার।
এ পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারও কি এ সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে যাবেন?
এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, অর্থপাচার, দুর্নীতি কিংবা অন্য কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বাজেটে দেয়া বিশেষ এ সুবিধা পাবেন না।
অর্থবিল ২০২২-এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কর ফাঁকি কিংবা ফৌজদারি মামলা প্রক্রিয়াধীন থাকলে বিশেষ এ সুবিধা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, অর্থপাচারের দায়ে অভিযুক্ত আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা বহুল আলোচিত পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক মামলা রয়েছে। কাজেই বিচারাধীন মামলায় কোনো অপরাধীর ক্ষেত্রে সুযোগটি গ্রহণযোগ্য নয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, পি কে হালদার টাকা বৈধ করতে পারবেন না। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগ নেই। প্রচলিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইনের আওতায় এনে তাকে বিচার করতে হবে। প্রচলিত আইনটি খুব শক্ত। এ আইনে যাবজ্জীবন কারদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দুটিরই বিধান আছে।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম পি কে হালদার। তিনি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। আবার দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন।
দুই বছর আগে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েন গত মে মাসে।
বাংলাদেশে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং পিপলস লিজিংসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকের ৩৬টি মামলা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশটির ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট বা ইডি তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতিসহ অন্যান্য অভিযোগ তদন্ত করছে।
পশ্চিমবঙ্গের অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পি কে হালদারের বাড়িসহ স্থাবর অনেক সম্পদ কেনার কথা বলা হয়েছে। সে সব সম্পদের তদন্ত করছে ইডি।
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু গ্রেপ্তারের পর ভারতেও পি কে হালদারের অনেক সম্পদ থাকার খবর বেরিয়েছে, সে জন্য সেখানকার তদন্তের তথ্য বাংলাদেশের জানা প্রয়োজন।
ভারতের সাথে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার।
দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, সে অনুযায়ী পি কে হালদারকে যাতে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত আনা যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, পি কে হালদারকে ফেরত দেবে ভারত এবং পাচারের টাকাও উদ্ধার করা যাবে।