গ্রাহক ব্যাংকে কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে তা প্রাপ্তিস্বীকার পত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ।
সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০০৫ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকদের অভিযোগ ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির সময় কোনোভাবেই ৪৫ দিনের বেশি হওয়া যাবে না। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে অভিযোগ সেল পরিচালনা করতে হবে।’
কিন্তু দেশের কোনো কোনো ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের অভিযোগ বা আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গোচরীভূত হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কোনো ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের অভিযোগ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন এই নির্দেশনা দিয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ জন্য ব্যাংকের আমানতকারী, ঋণগ্রহীতাসহ সব ধরনের গ্রাহকের অভিযোগ কিংবা আবেদনপত্র ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ যে কার্যালয় বা দপ্তরেই দেয়া হোক না কেন, তা প্রাপ্তিস্বীকার প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। আগের নির্দেশিত সময়ের মধ্যে এবং আবেদনপত্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে।’
এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে তফসিলি ব্যাংকগুলোর শাখা অফিসসহ সব কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে।
হয়রানি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ
গ্রাহক হয়রানি বন্ধে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ প্রথমে ‘হেল্প ডেস্ক’ নামে সেবাকেন্দ্র চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ২০১২ সালের জুলাইয়ে ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস (এফআইসিএসডি)’ নামে আলাদা বিভাগ গঠন করা হয়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ গ্রহণের শুরুতে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকলেও ২০১১ সালের শেষ দিকে অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে অভিযোগ সেল খোলার নির্দেশ দেয়া হয়। কেউ সেবা নিতে গিয়ে হয়রানিতে পড়লে কিংবা কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলে প্রথমে ওই শাখায় প্রতিকার চাইতে হবে। শাখায় প্রতিকার না পেলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অভিযোগ কেন্দ্রে জানাতে হবে।
কোনো গ্রাহক ব্যাংকিং সেবা পেতে হয়রানির শিকার হলে বা কোনো অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর ব্যবস্থাও আছে। সরাসরি ১৬২৩৬ এই নাম্বারে টেলিফোন করে অভিযোগ করা যায়। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপ, ই-মেইল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের নির্ধারিত ফরম, ডাকযোগে এবং সশরীরে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
অভিযোগ ও নিষ্পত্তির সংখ্যা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে ২০২১ সালে টেলিফোন ও লিখিতভাবে মোট ১৩ হাজার ৫০৪টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ হাজার ৫০টি। নিষ্পত্তির হার ৮২ শতাংশ। বাকি ২ হাজার ৪৫৪টি অভিযোগ রয়েছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
২০২০ সালে ১০ হাজার ২৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ৮ হাজার ৮৭৩টি নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১ হাজার ৩৯৬টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ কেন্দ্র চালু হয় ২০১১ সালের মার্চে। সেই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৬টি অভিযোগ আসে। যার সবই নিষ্পত্তি হয়েছে।
২০১৫ সাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আর অনিষ্পন্ন নেই। সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
২০১৬ সালে ৮ হাজার ৯১৯টি অভিযোগের মধ্যে প্রায় সব কটি নিষ্পন্ন হয়েছে। অনিষ্পন্ন রয়েছে মাত্র ৯টি।
২০১৭ সালে ৯ হাজার ৪টি অভিযোগের মধ্যে ১৩টি রয়েছে অনিষ্পন্ন।
২০১৮ সালে ১১ হাজার ৯৪০টি অভিযোগের মধ্যে ১১ হাজার ৭৬৬টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৭৪টি।
২০১৯ সালের ১১ হাজার ১৬৪টি অভিযোগের মধ্যে ১৪৬টি ছাড়া বাকি সব নিষ্পত্তি হয়েছে।