পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
সোমবার ডিএসইর মিডিয়া সেন্টারে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।
বন্ডবাজার সম্প্রসারণ, কোম্পানির লভ্যাংশের করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি, এসএমই কোম্পানির কর হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কর হ্রাস ও স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাসের সুপারিশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন ও তামাক কোম্পানি ছাড়া পুঁজিবাজারের কোম্পানির কর আড়াই শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন। তবে যেসব কোম্পানি তাদের মোট শেয়ারের কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাজারে ছেড়েছে, তারাই এই সুবিধা পাবে।
এই সিদ্ধান্তে বড় ও স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন ডিএসই প্রধান।
ফলে এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হবে ২০ শতাংশ, যা এখন পর্যন্ত আছে সাড়ে ২২ শতাংশ।
তবে করপোরেট কর পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির ক্ষেত্রেও কমেছে আড়াই শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে যেসব কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের পার্থক্য সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে এটি আরও বেশি ব্যবধান থাকা উচিত বলে মনে করেন ইউনুসুর। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবারের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ।’
আরও যেসব দাবি ডিএসইরদেশে করপোরেট বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট উল্লেখ করে ডিএসই প্রধান মনে করেন, নীতি সহায়তার মাধ্যমে কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরি করা গেলে দেশের পুঁজিবাজার তথা সমগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে। জিরো কূপন বন্ডের মতো সবে করপোরেট বন্ডের সুদকে কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার থেকে ন্যূতম ১ লাখ টাকার পাশাপাশি লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
পাঁচ বছরের জন্য এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর করহার ন্যূনতম পাঁচ বছরের জন্য ১০ শতাংশ করার দাবিও জানান ইউনুসুর।
করপোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং করপোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর চূড়ান্ত করহার ১০ শতাংশ করার দাবিও করেন তিনি।
সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ (পূর্বে এটি ০.০১২৫ শতাংশ ছিল) করতে অথবা আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক নিয়মিত হারে আয়কর প্রদানের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ডিএসইর পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, শরিফ আনোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার, উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।