বাজেট ঘোষণার দিন থেকে টানা তিন কর্মদিবস নেতিবাচক রইল পুঁজিবাজার। ধারাবাহিক পতনেও চাঙা রয়েছে স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
কয়েক দিনের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি ও লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বল্প মূলধনি ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ভিত্তির কোম্পানিগুলো আধিপত্য বজায় রেখেছে।
প্রতিদিনই এসব কোম্পানির দর বাড়ছে। দর বৃদ্ধির তালিকার বড় অংশজুড়ে থাকছে এসব কোম্পানির।
দুর্বল কোম্পানিগুলোর দরবৃদ্ধি সূচকে বেশি পয়েন্ট যোগ করতে না পারা এবং যতগুলো কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি কোম্পানির দর পতনে সূচক হ্রাস পেয়েছে ৩৯ পয়েন্ট।
মোট ৮৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে, বিপরীতে ২৮৩ টির কমেছে। আর ৪২টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে গতকালের দামে।
সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন। আগেরদিন লেনদেন চলে যায় ২৫ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্নে। একদিন পরেই সেটা বেড়ে ৮০০ কোটি ছুঁই ছুঁই হয়েছে।
ব্রোকার হাউস এক্সপো ট্রেডার্সের সিইও শহিদুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের বেশ কয়েকটি দাবি ছিল যার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায়নি। এতে বিনিয়োগকারীরা নিরাশ হয়েছেন। বড় বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশে বেছে নিয়েছে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। এসব কোম্পানির শেয়ারের ট্রেডিংয়ে লেনদেন বাড়লেও সূচক বাড়েনি।'
দুর্বল কোম্পানিগুলোর ধারাবাহিক দর বৃদ্ধি
গত দুই দিনের মতোই আজকেও দর বৃদ্ধির তালিকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল। দর বৃদ্ধির প্রায় সবগুলোই ছিল এ ধরনের কোম্পানি। এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় না। কোনোটি লভ্যাংশ দিলে খুবই নগণ্য।
এগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশের তিনটির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের ওপরে, পাঁচটির ৪ শতাংশের বেশি, আর দুটির ৩ শতাংশের বেশি।
টানা দুই দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেখা গেল ইন্স্যুরেন্স খাতের কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডকে। ৯.৭৭ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির, গতকাল রোববার ৯.৯১ শতাংশ।
চলতি বছরেই তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয়েছে ৮ জুন। অভিহিত মূল্যের কিছুটা ওপরে থেকে লেনদেন হচ্ছে শেয়ার। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে আজ ১৪ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে, গতকাল এটির দর ছিল ১৩ টাকা ৩০ পয়সা।
গতকাল ৯.০৭ শতাংশের পরে আজ ৯.৭৩ শতাংশ দর বেড়েছে মুন্নু ফেব্রিকসের। নিয়মিত লভ্যাংশ দিতে না পারার পর ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয় কোম্পানিটিকে। গত বছর ফেরে সেখান থেকে। কিন্তু নগণ্য পরিমাণ মুনাফার পর কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ এসেছে শেয়ারে ১০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯.১৩ শতাংশ দর বেড়েছে তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের। এই কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাস ভালো নয়। গত তিন বছরে ১ থেকে আড়াই শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি। তার পরেও মাঝে মাঝে দাম বাড়তে দেখা যায়। রোববার ২০ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি আজ হাতবদল হয়েছে ২২ টাকা ৭০ পয়সায়।
চতুর্থ অবস্থানে প্রাইম টেক্সটাইলের দর ৪.৫১ শতাংশ বেড়ে ২৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিলেও গত দুই বছর ১ ও ২ শতাংশের বেশি দিতে পারেনি মাত্র ৩৮ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি।
কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দর ৪.৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। রোববার শেয়ারের দাম ছিল ৬৭ টাকা ৩০ পয়সা। কয়েক বছর ধরে ৫ শতাংশ হারে কখনো নগদ, আবার কখনো বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি। গত ১৯ মে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দর বেড়ে ৭০ টাকা ছাড়িয়েছে দাম।
ইমাম বাটনের দর বেড়েছে ৪.৪২ শতাংশ। স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটি লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাস ভালো নয়। গত ২৫ মের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দর বাড়ছে।
আনলিমায়ার্ন ডায়িংয়ের দর ৪.২১ শতাংশ দর বেড়ে ৩৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাসও খুব বেশি ভালো নয়। গত দুই বছরে ২ শতাংশ করে লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ ছাড়া দর কমে অষ্টম স্থানে থাকা সাফকো স্পিনিং ২২ টাকা ৯০ পয়সা, রহিম টেক্সটাইল ২২৫ টাকা ৭০ পয়সা এবং এইচআর টেক্সটাইল ৮৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের ইতিহাস খুব বেশি ভালো নয়।
দর পতনের শীর্ষে যারা
শীর্ষ ১০টির দরই কমেছে সর্বোচ্চ সীমায়।
সাউথ ইস্ট ব্যাংকের দর ১৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে ১৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
দ্বিতীয় দর কমেছে রূপালী ব্যাংকের। রোববার ২৯ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। সেটি আজ হাতবদল হয়েছে ২৮ টাকা ৪০ পয়সায়।
মাইডাস ফাইন্যান্সের দর ১৫ টাকা থেকে কমে ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
রোববার ৯.৪৮ শতাংশ বাড়ার পরে সোমবার ২ শতাংশ কমেছে বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকসের দর। ৪৫ টাকা থেকে কমে ৪৪ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে শেয়ার। বৃহস্পতিবার ৬.২০ শতাংশ বেড়ে ৪১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। এই কোম্পানিটির ল্যভাংশের ইতিহাসও ভালো নয়।
এ ছাড়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫৪ টাকা ১০ পয়সায়, বঙ্গজ লিমিটেড ১৩৮ টাকায়, সিনোবাংলা ৫৪ টাকা ৩০ পয়সা, রেনউইক যজ্ঞেশর এক হাজার ৮২ টাকা ৭০ পয়সা, রংপুর ফুডস ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা এবং এশিয়া প্যাসিফিক ৫৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
সূচক কমাল যারা
সূচক সবচেয়ে বেশি নামিয়েছে গ্রামীণফোন। কোম্পানিটি একাই সূচক ফেলেছে ৪.২৯ পয়েন্ট। কোম্পানিটির দর কমেছে ০.৫৯ শতাংশ।
বেক্সিমকোর কারণে সূচক কমেছে ৩.৮৭ পয়েন্ট। কোম্পানিটির দর কমেছে ১.৯ শতাংশ।
ওয়ালটন হাইটেকের দর ০.৫১ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৩ পয়েন্ট।
লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের ১.২৪ শতাংশ দর কমায় ১.৮৫ পয়েন্ট এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ০.৩৩ শতাংশ দরপতনে ১.৭২ পয়েন্ট সূচক কমেছে।
এ ছাড়া বিকন ফার্মা, বেক্সিমো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দর পতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক ফেলেছে ২১.৮৬ পয়েন্ট।
সূচক বাড়ানোর চেষ্টায় যারা
সূচকে কোনো কোম্পানি এককভাবে এক পয়েন্টও যোগ করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি সূচক বাড়িয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২.৭২ শতাংশ, যার কারণে সূচক বেড়েছে ০.৯৮ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ০.৫৭ পয়েন্ট যোগ হয়েছে ইসলামি ব্যাংকের দর বৃদ্ধির কারণে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ০.৬২ শতাংশ।
জেএমআই হসপিটালের দর ৩.১৬ শতাংশ বাড়ার ফলে সূচক বেড়েছে ০.৫৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বেক্সিমকো সুকুক, মুন্নু ফেব্রিক্স, এসিআই ফর্মুলেশন লিমিটেড, এনভয় টেক্সটাইল, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি ফাইন্যান্স ও পূবালী ব্যাংকের দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে, তবে তা খুবই সামান্য।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচকে যোগ করতে পেরেছে মাত্র ৫.০১ পয়েন্ট।