আগাম ঘোষণা ছাড়া খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে বিশ্বকে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বিষয়টিতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি দেয়ার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদরদপ্তরে সংস্থাটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে প্রথম দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ এ অবস্থান তুলে ধরে।
স্থানীয় সময় রোববার ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হয়। এর শুরুতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর হঠাৎ করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ঠিক হবে না। রপ্তানি বন্ধ করতে হলে আমদানিকারক দেশকে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটা সময়ের আগে তা জানাতে হবে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ করার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ নিয়ে সৃষ্ট সংকট এড়াতে তিনি বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ডব্লিউটিওর ১৬৪ দেশের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সম্মেলনের প্রথম দিনে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো আইওয়ালা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যসংকট বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে চলমান বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হঠাৎ করে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ না করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে।
সম্মেলনের প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশসহ অন্যান্য এলডিসিভুক্ত দেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। সেটা আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
‘২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ আর শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবে না। তাই এলডিসির পক্ষ থেকে ডব্লিউটিওতে দেয়া শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মৎস্য খাতে ভর্তুকির আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মৎস্য খাতে ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ চায় বাংলাদেশ। আমরা মনে করি উন্নয়নশীল দেশের মৎস্য খাতের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই খাতে ভর্তুকি দেয়াটা জরুরি।
‘অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষ তাদের জীবিকার জন্য মৎস্য খাতে জড়িত। তাই স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা টিকিয়ে রাখার জন্য মৎস্য খাতে ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ রাখার প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাসে এলডিসিভুক্ত দেশকে সরকারি পর্যায়ে বড় আকারে খাদ্য মজুত করার মতো সুযোগ রাখা প্রয়োজন। কৃষিসহ ডব্লিউটিওর অন্যান্য যেকোনো সংস্কার বাংলাদেশ সমর্থন করবে।
‘সংস্কার অব্যশই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ হতে হবে, যেখানে সবার মতামত দেয়ার সুযোগ থাকবে। প্রতিটি সদস্যের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিতে হবে।’