বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ২ জুন দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমার আভাস দিয়েছিলেন। তবে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের দিন ৯ জুন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সে হিসাবে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ২০৫ টাকা।
তবে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দাম ১৯৮ টাকা লিটারেই বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল।
দোকানিরা বলছেন, নতুন দাম নির্ধারণ হলেও বাজারে আগের দামের তেল রয়ে যাওয়ায় পুরনো দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
সবশেষ সিদ্ধান্তের আগে ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা।
নতুন দর অনুয়ায়ী এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম মিল গেটে ১৯৫, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও খুচরায় ২০৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল মিল গেটে ৯৫২, পরিবেশক পর্যায়ে ৯৭২ ও খুচরায় ৯৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি মিল গেটে ১৮০, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ ও খুচরায় ১৮৫ টাকা দরে বিক্রি হবে। পাম তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মিল গেটে ১৫৩, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও খুচরায় ১৫৮ টাকা লিটার।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলেন, নতুন দাম নির্ধারণ হলেও বাজারে আগের দামের তেলই বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
টাউন হলের তানিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক মানিক মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে আনা সয়াবিন তেলই এখনো বিক্রি করছি। দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি করছি ২৯৬ টাকা ও পাঁচ লিটার ৯৮৫ টাকা। পুএনা দামের তেলে বাজারে যে পরিমাণ আছে তা দিয়ে এক সপ্তাহ চলবে। এরপর নতুন করে সরবরাহ পাওয়া তেলের বোতলে যে দাম উল্লেখ থাকবে সে অনুযায়ী বিক্রি করবো।’
একই মার্কেটের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল স্টোরের মালিক আল আমিন বলেন, ‘সয়াবিন তেল হাফ লিটার ১০৪, এক লিটার ১৯৮, দুই লিটার ৩৯৮ ও পাঁচ লিটার ৯৮৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। আজও ডিলারের কাছ থেকে পুরনো দামেই তেল কিনেছি। যেদিন থেকে কিনবো সেদিন থেকেই বোতলে উল্লেখ থাকা দরে তেল বিক্রি করবো।’
কারওয়ান বাজারেও আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। নতুন দাম নির্ধারণ হলেও সব দোকানেই আগের দামের তেল রয়ে গেছে। তা বিক্রিও হচ্ছে বোতলে উল্লেখ করা দামেই। তবে অধিকাংশ দোকানেই খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা যায়নি। দুই-একটি দোকানে খোলা তেল বিক্রি করলেও তারা আগের দামই রাখছেন।
কারওয়ান বাজারের শাহ মিরাজ জেনারেক স্টোরের মালিক বলেন, ‘নতুন দামের তেল পাইকার এখনো দেয় নাই। যতদিন পুরনো দামে তেল পাবো ততদিন আগের দামেই তেল বিক্রি করবো।’
কারওয়ান বাজারে সোনালী ট্রেডার্স পাম অয়েল বিক্রি করে। দোকানের মালিক আবুল কাশেম বলেন, আগের নির্ধারিত দাম ১৫৮ টাকা লিটারে পাম অয়েল বিক্রি করছি।
তবে ব্যতিক্রম পাড়া-মহল্লার দোকানগুলো। তারা আগে সরবরাহ পাওয়া তেল বোতলের গায়ের দামের থেকে লিটারে দুই থেকে ১৫ টাকা বেশি নিচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় মায়ের দোয়া স্টোরে ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা। এছাড়া দুই লিটার ৪০০, এক লিটার ২০০ ও হাফ লিটার ১০৫ টাকা দরে বিক্রি করছে।
এখানে আরিয়ান স্টোর নামে দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। তারা শুধু খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। দাম জানতে চাইলে দোকানের মালিক আইয়ুব আলী বলেন, ‘খোলা সয়াবিন তেল কেজি হিসেবে বিক্রি করি। এক কেজির দাম ২২০ টাকা। দাম বাড়ার কারণে বোতলের তেল বিক্রি করছি না।’
বাড্ডায় মদিনা স্টোরে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা লিটার। এখানে বোতলজাত সয়াবিন এক লিটার ২০০, দুই লিটার ৪০০ ও পাঁচ লিটার এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক বছর আগেও বোতলজাত তেলের দাম ছিল ১৩৪ টাকা লিটার। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা মার্চ মাস থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা দাম নির্ধারণ দাবি তোলেন। সরকার তাতে রাজি না হলে ওইদিন থেকেই বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে দেখা দেয় ঘাটতি।
এরপর সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেয়। আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা।