প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ছয়টি ‘রোগ’ চিহ্নিত করতে পারলেও সেগুলো সারাতে ওষুধ ঠিকমতো হয়নি বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ-সিপিডি।
বাজেট ঘোষণার পরের দিন শুক্রবার রাজধানীর লেক শোর হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ পর্যালোচনা করেন সিপিডির গবেষকরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, বাজেটে বিশেষ কিছু মানুষকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে সৃজনশীলতার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে, সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে।
বাস্তবতা বিবেচনায় বাজেটে আরও সৃজনশীলতা দরকার ছিল বলেও মনে করে সিপিডি। তারা বলেছে, দরকার ছিল প্রাধিকারভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের।
প্রস্তাবিত বাজেটের সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ না থাকা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কম বরাদ্দ ও রাজস্ব নীতি সংস্কারের পদক্ষেপ না থাকার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। চাল, ডালসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দরকার ছিল, কিন্তু করা হয়নি। বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেয়া হবে, কিন্তু দেয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে।’
বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ৩২ নিত্যপণ্যের আমদানিতে শুল্ক রেখে কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব— সে প্রশ্ন তুলে ফাহমিদা বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ সরকারি হিসাবেই বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসার ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনো লক্ষণ নেই বরং মন্দাভাবের দিক যাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ।’
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তোফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ধনী ও অর্থপাচারকারীদের জয় হয়েছে। বাজেটে যাদের টাকা-পয়সা আছে, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, যারা টাকা পাচার করে; এই শ্রেণির জয় হয়েছে। গরিবের জন্য বাজেটে তেমন কিছু নেই। সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে মধ্যবিত্ত।’
এই মুহূর্তে আমদানি করা ল্যাপটপের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘এতে বোঝা যাচ্ছে যারা বাজেট তৈরি করেন, তাদের বর্তমান বাজারের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ধরেই নিয়েছে করোনা চলে গেছে। করোনার সামগ্রীর ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। কোনো কারণে করোনা মহামারি আবার ফিরে এলে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করবে।’
কর ফাঁকি রোধে কঠোর কোনো পদক্ষেপের কথা বাজেটে বলা হয়নি উল্লেখ করে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বাজেটে পাচারকারীদের দেশে টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেয়া হলো, অথচ কর ফাঁকি রোধে কঠোর কোনো পদক্ষেপের কথা বলা হলো না। প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ নেই।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল এবং রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।