বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার কিছু বলা নেই।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ, কিন্তু বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা গতবারের চেয়ে কম; তাহলে কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।‘আমরা যখন ডিমান্ড কমাব, তখন প্রবৃদ্ধি অবশ্যই কিছুটা স্যাকরিফাইস করতে হবে। সরকার বলছে, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ করা হয়েছিল, সেখান থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমি মনে করি, সাড়ে ৭ অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি যেভাবে যাচ্ছে বা বেশিরভাগ দেশই মন্দার দিতে চলে গেছে। নেগেটিভ না হলেও তারা খুব স্বল্প প্রবৃদ্ধিতে, অর্থাৎ এক, দেড় বা দুই পার্সেন্টে আছে। সেখানে বাংলাদেশে সাড়ে ৭ পার্সেন্ট প্রবৃদ্ধি হবে, এটা আমি মনে করি সঙ্গত নয়।’
মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনা। সেটাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। এখানে মনিটরিং পলিসি (মুদ্রানীতি) কীভাবে ব্যবহার করবে সরকার, এটাও বাজেটের বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যে এক্সচেঞ্জ রেটকে কীভাবে সাপোর্ট দিবে, মূলস্ফীতি কীভাবে কমিয়ে আনবে, সেগুলো একেবারেই সুস্পষ্ট করা হয় নাই। এই কারণে এই বাজেটের ম্যাক্রো অবজেক্টিভগুলো নিয়ে আমাদের অনেক সন্দেহ আছে।’
তিনি বলেন, ‘ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। অনিশ্চয়তা অনেক জায়গাতেই আছে, যেমন- সাবসিডিতে অনিশ্চয়তা আছে। তা ধরা হয়েছে ৮২ হাজার কোটি টাকা। আড়াইটা পদ্মা সেতুর পরিমাণ অর্থ আমরা সাবসিডিতে দিচ্ছি। তারপরেও এটা বেড়ে যেতে পারে।
কারণ এটা বৈশ্বিক মূল্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। সরকার কখন দাম বাড়াবে সেটার ওপরও নির্ভর করবে। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বা আরও বেশি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আহসান এই মনসুর বলেন, ‘তবে বাজেটে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারের কিছু ব্যয় আছে যেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া করা যায় না। যেমন- বেতন-ভাতা, পেনশন, প্রিন্সিপাল পেমেন্ট ইত্যাদি পরিশোধ করতেই হবে। সবমিলিয়ে বাজেটে কিন্তু খুব একটা সুযোগ থাকে না বড় কিছু করার।
এ বছর বিশেষ অর্থনৈতিক কারণে আরও সংকুচিত হয়েছে আসছে। কারণ এ বছর বড় ধরণের রাজস্ব ঘাটতি হবে, আগামী বছরেও হবে।’
তিনি বলেন, ‘এতে সরকারকে সেভাবে সংযত হতে হয়েছে। এডিপির সাইজটাও সেরকমভাবে বাড়ে নাই। হয়তো জিডিপির তুলনায় কমেছে। এবং বড় কোনো প্রকল্প হাত দেয়া হয় নাই। এবং হয় নাই, সেটাই কাম্য।’