বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। করোনা মহামারির দাপট শেষে বড় ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ালেও ছোটদের বেশির ভাগের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। মূলধন সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সুখবর দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর মূল্য সংযোজন করের চাপ কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
বর্তমানে পাইকারি ব্যবসায় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। এ খাতে যে পরিমাণ বিক্রি বা লেনদেন হয়, তার বিপরীতে উল্লেখিত হারে ভ্যাট দিতে হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে দেড় শতাংশ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এই হার কার্যকর করা হলে পাইকারি ব্যবসা খাতে করের চাপ কমবে এবং পণ্য ও সেবা সস্তা হবে। এতে উপকৃত হবেন ভোক্তা।
নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো ব্যবসায় যে পরিমাণ ‘মূল্য সংযোজন’ হয়, তার ওপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট আদায় করে সরকার। মাসিক রিটার্নের সময় এই ভ্যাট পরিশোধ করা হয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীদের মূল সমস্যা হচ্ছে তারা যে লেনদেন করে থাকেন, তার কোনো হিসাব সংরক্ষণ করেন না। এ কারণে সরকার ভ্যাট ফেরত পায় না। যদি এটা করা সম্ভব হতো, তা হলে ভ্যাটের চাপ কমে যেত।’
তিনি বলেন, ‘এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় বাড়াতে হলে যোগ্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আওতায় এনে অটোমেশন করতে হবে। তা হলে আদায় বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বাড়বে।’
পাইকারি ব্যবসা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এ খাতের অংশ চলতি মূল্যে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা শতকরা হারে ১৫ শতাংশ।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পাঁচটি খাত প্রধান চালিকাশক্তি। এর মধ্যে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা অন্যতম। উৎপাদন বা ম্যানুফেকচারিং খাতের পরই এ খাতের অবস্থান।
এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আহরণের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে নামমাত্র ভ্যাট আসে। বছর শেষে বর্তমানে এ খাত থেকে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা। অথচ আদায়ের সম্ভাবনা আছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, পাইকারি ব্যবসায় আদায়যোগ্য ভ্যাটের ৯০ শতাংশই ফাঁকি হয়।
এর প্রধান কারণ দুটি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আওতার বাইরে। দ্বিতীয়ত, অটোমেশন না করা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এনবিআর বলেছে, এখন পর্যন্ত ২ লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী ভোক্তার কাছ থেকে সরাসরি ভ্যাট আহরণ করবে খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান। এ জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি যন্ত্র বসানোর কথা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখন পর্যন্ত অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে তা স্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ভ্যাট আদায় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
‘যতদিন পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে না পারে, তত দিন পর্যন্ত পাইকারি থেকে ভ্যাট আদায় বাড়বে না।’