২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সংস্কৃতিবান্ধব নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সংস্কৃতি খাতে ন্যূনতম ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, এ বাজেট দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের হতাশ করেছে।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে, নানাভাবে তারা এ দেশে মৌলবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এসব অপতৎপরতা রোধ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে প্রতিহতের পাশাপাশি দেশকে অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, মানবচেতনাসম্পন্ন ধারায় পরিচালনা করতে গেলে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই।
বর্তমান সরকার এবং সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার তাদের বক্তব্যে নিজেদের সংস্কৃতিবান্ধব হিসেবে উল্লেখ করে দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন, কিন্তু সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে গেলে যে ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রতি বছরই বাজেটে সংস্কৃতি খাত অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।
উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, উদীচীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে মোট বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ সংস্কৃতি বরাদ্দের জন্য দাবি জানিয়ে এলেও বাস্তবিক অর্থে শূন্য দশমিক ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ দেয়া হয়।
এত কম অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ তো দূরের কথা, শিল্পকলা অ্যাকাডেমিসহ সরকারি-বেসরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনাই দুরূহ হয়ে উঠেছে।
দেশে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার বিকাশের স্বার্থে অবিলম্বে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেয়ার জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা; যা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৫৭৯ কোটি টাকায়।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বেশি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, নাটক ইত্যাদি সুকুমার শিল্পের সৃজনশীল উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।
‘দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা, প্রদর্শন, প্রকাশনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ চিহ্নিতকরণ, খনন, সংস্কার, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট সংরক্ষণসহ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন, একুশে পদক প্রদান এবং বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি অর্থবছরে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতির স্থলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।’