বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মূল্যস্ফীতির আগুনেও ছাড় মিলল না আয়করে

  •    
  • ৯ জুন, ২০২২ ১৭:৩৩

গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো উচিত ছিল। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে । তাদের বেশির ভাগই এখনও করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের জীবনে যখন নাভিশ্বাস ওঠার মতো, তখন ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে ছাড় দিলেন না অর্থমন্ত্রী।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে কোনো ছাড় দেয়ার ঘোষণা নেই। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই অর্থাৎ বার্ষিক ৩ লাখ টাকাই বহাল রাখার কথা উল্লেখ করলেন অর্থমন্ত্রী।

করোনা-পরবর্তী জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এতে করে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। এ ছাড়া গত দুই বছর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি ওঠে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। তবে সেই দাবি পূরণ করতে চাননি অর্থমন্ত্রী।

দেশে কর ও জিডিপি অনুপাত অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মতো আশাব্যঞ্জক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের সোপানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ অনুপাত অনেকাংশে বাড়ানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে দেশের করযোগ্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা বৃদ্ধি পাবে।’

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে যেসব প্রস্তাব করেছেন সেগুলো হচ্ছে- কতিপয় ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক। স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ব্যতীত অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভার্সন চালু রয়েছে, তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান প্রবর্তন।

অন স্পট কর নির্ধারণের বিদ্যমান বিধানকে কেবলমাত্র গ্রোথ সেন্টারসমূহে সীমাবদ্ধ না রেখে সকল পর্যায়ে এর প্রয়োগ বিস্তৃত করা হবে। ধারাবাহিক তিন বছর বা ততোধিক সময়ব্যাপী কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পরিচালকদের নিকট থেকে বকেয়া অবিতর্কিত কর আদায়ের বিধান করা হবে।

রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান প্রবর্তন করার কথাও বলা হয় বাজেট বক্তৃতায়।করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ হলেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত এ আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতার ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ হবে ৫ হাজার টাকা।

অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এসব সিটি ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাতের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের পরিমাণ হবে ৩ হাজার টাকা।

করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমেও অর্থমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়াতে চান। এ জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে তিনি ছয়টি ‘আইনি বিধান’ আরোপের প্রস্তাব করেন।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিরূপ প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে করে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।

তখনকার প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার আয়ে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়।ওই অর্থবছর বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার বদলে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে করহার কমানো হয়। এর পর থেকে তা অপিরবর্তিত রাখা হয়।

গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো উচিত ছিল। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে । তাদের বেশির ভাগই এখনও করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।’

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতো অর্থাৎ ৩ লাখ রুপি বহাল রাখা হয়েছে। ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আর বাংলাদেশে মাত্র ১ শতাংশ।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, যাতে করদাতা আগাম তার হিসাব সহজেই করতে পারেন।

বাংলাদেশে জোট সরকারের আমলে একবার তিন বছরের জন্য করমুক্ত সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়।এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ লাখ।

আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি।

তবে অর্থনীতিবিদসহ আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন-চার কোটি লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাই মনে করেন।

আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর