২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বেলা ৩টায় প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শুরু হয় বাজেট অনুমোদন দিতে বিশেষ মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকে অনুমোদন দেয়া হয় নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এবারের বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার।
করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের কপালে বেশ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দিন যতই যাচ্ছে, সংকট তত বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।
যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলটপালট করে দিচ্ছে। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। একই কথা বলেছে আইএমএফ। তীব্র খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর এক বছর। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনের আগের বছরের জাতীয় বাজেটে থাকে ভোটের হাওয়া। বাজেট সাজানো হয় ভোটের বিষয়টি মাথায় রেখে।
সংকট কাটিয়ে উন্নয়নে ফেরার বাজেট প্রস্তাবনায় এবার সেই ভোটের হাওয়া নেই। প্রকল্প অনুমোদনে সংসদ সদস্যদের তদবিরও তেমন একটি নেই। কাবিখা, টিআর কর্মসূচির জন্য বেশি বেশি বরাদ্দের দাবিও কম। রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে নেই দৌড়ঝাঁপ।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামালের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ পাঁচটি।
১. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখা।
২. বেকারত্ব সমাধানে কর্মসংস্থান বা চাকরির সুযোগ তৈরি।
৩. আয় বা রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। কারণ রাজস্ব আদায় বাড়লে সামাজিক সুরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করা যাবে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া।
৫. ভর্তুকির চাপ সামলানো। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার ভর্তুকিতে বেশি বরাদ্দ থাকছে। এটি না কমালে বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।
সক্ষমতা উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি পাস হয়েছে।
বাজেটের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত সামাজিক সুরক্ষা, ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা খাতে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এতে করে উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় ও দক্ষতা বাড়বে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে।
নতুন বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে বেশির ভাগ অর্থের জোগান দেয়া হবে।
এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে জোগান মিলবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে কর ব্যতীত রাজস্ব থেকে আসবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে প্রাক্কলন করা হবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারও সম্প্রসারণমূলক (বেশি ব্যয়) বাজেট দিচ্ছে সরকার। এ জন্য বাজেটে বেশি ঘাটতি রাখা হচ্ছে।
৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই পরিকল্পনায় মোট আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে (অনুদানসহ) ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ—এ দুটি উৎস থেকে এই ঘাটতি মেটানো হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার কাছ থেকে এবার ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে বাজেটে অর্থায়নের জন্য।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হচ্ছে এবং বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী দিনে এটি আরও সচল হবে।
এ জন্য অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রাক্কলন করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশ।