বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টি প্লাস ওয়ান পুঁজিবাজারের জন্য ভালো না খারাপ

  •    
  • ৯ জুন, ২০২২ ০৮:১০

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে এমন নয়। তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের সিদ্ধান্ত ও মতামত আসার পরে বিএসইসি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে যে, এটা করবে কি করবে না।

পুঁজিবাজারে টি প্লাস ওয়ান সেটেলমেন্ট, অর্থাৎ এক দিনে শেয়ার ম্যাচুরড হলে পরের দিনই বিক্রি করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেটি বাজারে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারে এই স্যাটেলমেন্ট পদ্ধতি চালু করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায় তা আগামী ১২ জুনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

টি প্লাস ওয়ান বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড কেনার পরদিনই বিক্রি করতে পারবেন। তবে ‘জেড’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ সুযোগ পাওয়া যাবে না।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে টি প্লাস টু সেটেলমেন্ট চালু রয়েছে। ফলে ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার কেনার তৃতীয় দিনে বা দুই দিন পর বিক্রি করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।

লেনদেন বাড়বে

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও মনে করেন, নতুন এই পদ্ধতি পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়াবে। এটি শেয়ার কেনাবেচা বাড়াবে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছি, মার্কেটের ভলিউম বাড়াতে। মার্কেট ইজি গোয়িং হোক, যাতে আরও কুইক অপারেশনাল কাজগুলো করা যায়। সে ক্ষেত্রে টি প্লাস ওয়ান জরুরি। আজকে শেয়ার কিনলে যদি এক দিন পরই ম্যাচিউরড হয়ে যায়, তাহলে এগুলো সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য বাজারে দিনে কিনে দিনে বিক্রি করার সুযোগও আছে। সেখানে টি প্লাস ওয়ান তো অবশ্যই আমাদের এখানে কখনও না কখনও হওয়া উচিত।

তবে এই পদ্ধতিতে চট করে চলে যাওয়ার বদলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘এর সঙ্গে ডিএসইর সেটেলমেন্ট প্রসেসিংগুলোর ক্ষেত্রে কিছু কাজ করতে হবে। ফরেন ট্রেডের ক্ষেত্রে যে প্রসেসে হয় সেটাতেও টি প্লাস ওয়ান হলে একটি জটিলতার মধ্যে পড়ে যায় কি-না, আমি নিশ্চিত নই। তবে আমার মনে হয় ঐটাতে একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমাদের এই জিনিসগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেখে তারপরে যাওয়া উচিত। আমি এটার পক্ষে, তবে এই জিনিসগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার পরই এটা হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের স্বল্পতা নিয়ে যে আক্ষেপ আছে, টি প্লাস ওয়ান সেই আক্ষেপ আরও বাড়িয়ে দেয় কি না, এ নিয়ে আলোচনাও আছে।

এ প্রশ্নে রিচার্ড বলেন, ‘বিনিয়োগকারী তো বিনিয়োগকারীই, তিনি একটা শেয়ার কিনে কালকে বিক্রি করার কথা চিন্তা করেন না। তার জন্য টি প্লাস ওয়ান নয়, ট্রেড যারা করে তাদের জন্য এটি। বিনিয়োগকারী কিন্তু শেয়ার কিনবে এক, দুই বা তিন বছরের জন্য। ট্রেডে যারা সরাসরি জড়িত তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য।’

‘আগে টি প্লাস সিক্স ছিল, টি প্লাস ওয়ানে কী সমস্যা’

এক দিনে সেটেলমেন্ট পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে অনেক ভালো একটি সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছেন প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম অনেক এগিয়েছে, ডিজিটাইলজড হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারও ডিজিটাইজেশনের দিকে আরও এক ধাপ বেশি এগিয়ে যাবে।

‘আগে টি প্লাস সিক্স ছিল, সেটি পরে ধাপে ধাপে কমিয়ে টি প্লাস টু করা হয়েছে। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এটা তারই নজির।’

দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের চেয়ে ডে ট্রেডিং উৎসাহিত করবে বলে যে সমালোচনা- সেই প্রশ্নে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডে ট্রেডিং উৎসাহিত হোক, হাউস কমিশন পাক। তাহলে ভলিউম বাড়বে। জিডিপিতে অবদান বেশি হবে। মানুষের উৎসাহ বাড়বে। দুই পরে টাকা লাগবে, পায় না। তিন দিন পরে শেয়ার বিক্রি করতে পারে। এতে মানুষ উৎসাহ পায় না।’

‘এতে পুঁজিবাজারের কী লাভ?’

টি প্লাস ওয়ান সেটেলমেন্ট পুঁজিবাজারে উন্নয়নের কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এতে শেয়ারবাজারের কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না। ব্রোকার হাউসের লাভ হবে। কারণ এটি চালু হলে টার্নওভার বেশি হবে, জুয়া খেলা আরও বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীর কীভাবে লাভ হবে?’

বিনিয়োগকারীরা দ্রুত শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন, এটা কী সুবিধা নয়?

এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা এক দিন পরই শেয়ার বিক্রি করবে, তারা কীভাবে বিনিয়োগকারী হন? বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন, ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, চার বছরের জন্য। এটা ভালো খারাপ কিছুই না। এটার পেছনে আর্গুমেন্ট কী? আর্গুমেন্ট হলো যারা ডেইলি ট্রেড করে তাদের সুবিধা হবে। তাদের টার্নওভার বাড়ল।

‘এগুলো শেয়ারবাজারের জন্য ভালো কিছু না। ভালো কিছু হবে যদি বাজেটের মধ্যে কিছু থাকে এবং ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে পারে। আসলে ভালো কিছু না করে তারা অকাজের মধ্যে সময় দেয়।’

আশা, শঙ্কা- দুটোই আছে

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘টি প্লাস ওয়ানের সুবিধা হলো, এটা বাস্তবায়ন হলে লেনদেনের পরিমাণটা বাড়বে। এতে করে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে কমিশন পায়, তাদের কমিশনের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

‘অসুবিধার দিক হলো যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আমরা যেমন শুনি যে, প্রকৃত বিনিয়োগকারী, অর্থাৎ যারা ভালো শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করবেন এবং ডিভিডেন্ড গ্রহণ করবেন, তেমন বিনিয়োগকারী গড়ে উঠার পেছনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে।’

বিষয়টির বাস্তবায়ন এখনই নয়

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে এমন নয়।

তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের সিদ্ধান্ত ও মতামত আসার পরে বিএসইসি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে যে, এটা করবে কি করবে না।

রেজাউলের ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এই পদ্ধতি পুঁজিবাজারকে গতিশীল করবে। তিনি বলেন, ‘এটি চালু হলে ট্রেডেবল শেয়ার বাড়বে। ফলে মার্কেটে টার্নওভার, তারল্য বাড়বে। বাজারে অস্থিরতা কমে আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর