সাত কর্মদিবসে ৩০৯ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির দুই দিনের সংশোধন শেষে আবারও ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার। সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে আবারও সূচকে যোগ হলো ১৫ পয়েন্ট। আগের দুই দিনে কমেছিল ২৮ পয়েন্ট।
আগের দুই দিন বাজার বিমার দখলে থাকলেও সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে বস্ত্র ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটধারীদের হাসিমুখ দেখা গেছে। অন্যদিকে সাধারণ বিমা খাতে দেখা গেছে উল্টো দৌড়। প্রায় প্রতিটি কোম্পানির দর কমেছে। এর মধ্যে সিংহভাগের কমেছে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত।
তবে সাধারণ বিমায় যে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে, সেটি স্পষ্ট লেনদেনে। এই একটি খাতে হাতবদল হয়েছে শত কোটির বেশি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকার সঙ্গে লেনদেনও ভালো হয়েছে বস্ত্র খাতে। ৯০ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে এ খাতের ৪৫টি কোম্পানির দর বেড়ে লেনদেন হয়েছে। আগের দিনের দামেই লেনদেন হয়েছে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার। বিপরীতে ৯টি বা ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কোম্পানির দর পতন হয়েছে।
অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ডের ২৯টির ইউনিট দর বেড়েছে, অপরিবর্তিত থেকে লেনদেন হয়েছে তিনটি। তিনটির দর কমতে দেখা গেছে।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ, ওষুধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে কিছুটা দর বৃদ্ধি দেখা গেছে। বাকি খাতগুলোয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির দর বাড়লেও পতনের সংখ্যাই বেশি ছিল।
দিনের শুরুতেই বড় উত্থান দেখা গেলে সময় গড়ানোর সঙ্গে নিম্নমুখী হয় সূচক। প্রথম ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩২ পয়েন্ট বেড়েছিল। তবে দরপতনের কারণে ১ ঘণ্টার মধ্যেই ২৯ পয়েন্ট কমে সূচক আগের অবস্থানে ফিরে যায়। পরবর্তী ২ ঘণ্টার ক্রয়চাপে প্রবণতায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪৮৪ পয়েন্ট স্থির হয় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
দিন শেষে যতগুলো শেয়ারের দর কমেছে, তার চেয়ে ৪১টি বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯০টির, কমেছে ১৪৯টির। গতকালের দরে লেনদেন হয়েছে ৪০টি।
সূচকের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। হাতবদল হয়েছে ৯১৯ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৭৩৯ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
বাজারের উত্থান প্রসঙ্গে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়মে উত্থান হয়েছে, যাকে আমরা বলতে পারি যে পুঁজিবাজারের গ্রামার মেনে। কারণ সাত কর্মদিবস উত্থানের পর দুই দিন সংশোধন গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে আজকে আবার কিছুটা বেড়েছে।’
বুধবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বস্ত্র ও মিউচুয়াল ফান্ডের প্রাধান্য দেখা গেছে
বস্ত্র, মিউচুয়াল ফান্ডের উত্থান ও বিমার উল্টো দৌড়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কোনো একটি সেক্টর উঠতে গেলে আরেকটি কিছুটা নেমে যায়, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমার মনে হয় বাজার ভালোই আছে। একটা খাত উঠতে গেলে আরেকটা কিছুটা সংশোধনের মধ্য দিয়ে যাবেই।’
সূচক বাড়াল যারা
সূচক বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ। এদিন কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১.৫১ শতাংশ, যার কারণে সূচক বেড়েছে ১.৭৮ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১.৩২ পয়েন্ট যোগ হয়েছে ওয়ালটন হাইটেকের দর বৃদ্ধির কারণে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ০.২৭ শতাংশ।
র্যাক সিরামিকসের দর ৪.৩৫ শতাংশ বাড়ার ফলে সূচক বেড়েছে ১.২৫ পয়েন্ট।
ব্র্যাক ব্যাংকের দর ১.১৮ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ১.০৯ পয়েন্ট। আর ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ০.২৩ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ১.০২ পয়েন্ট।
আর কোনো কোম্পানি সূচক ১ পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি।
এছাড়া ইসলামি ব্যাংক ০.৯৪ পয়েন্ট, ন্যাশনাল ব্যাংক ০.৯৪ পয়েন্ট, এসপি সিরামিকস ০.৭৫ পয়েন্ট এবং পূবালী ব্যাংক ০.৭৩ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৯.৮২ পয়েন্ট।
সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে গ্রামীণফোনের দর পতনে। টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিটির দর কমেছে ০.৪৬ শতাংশ। এতে করে সূচক হ্রাস পেয়েছে ২.৭৫ পয়েন্ট।
এরপরেই রেনাটার ০.৬১ শতাংশ মূল্য হ্রাসে সূচক পড়েছে ১.২৮ পয়েন্ট। তরে আর কোনো কোম্পানির দর পতনে সূচক ১ পয়েন্টের বেশি হ্রাস পায়নি।
এর বাইরে স্কয়ার ফার্মা ০.৯ পয়েন্ট, রবি ০.৭৬ পয়েন্ট, তিতাস গ্যাস ০.৭২ পয়েন্ট, আইসিবি ০.৩৫ পয়েন্ট, আইপিডিসি ০.৩২ পয়েন্ট, ইউনিলিভার ০.২৯ পয়েন্ট, জেনেক্স ইনফোসিস ০.২৫ পয়েন্ট এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দর পতনে সূচক কমেছে ০.২৪ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক ফেলেছে ৭.৬২ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে চারটিই মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে ৩টির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি, একটি করে কোম্পানির দর ৬, ৭ ও ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর বাকি চারটির দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।
সবচেয়ে বেশি ৯.৯৪ শতাংশ দর বেড়ে লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার। ২৯ মের পর থেকে দর কমতে থাকা কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিনে হাতবদল হয়েছিল ৩৫ টাকা ২০ পয়সায়।
এরপরেই দর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৯.৭০ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সায়। গতকালের দর ছিল ১০ টাকা ৩০ পয়সা। সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়ে ১৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া মেট্রো স্পিনিং মিলসের দর ৮.৫২ শতাংশ, বিডি কমের দর ৭.৮৪ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৬.৫৯ শতাংশ, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ডের ইউনিট দর ৫.৮১ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৫.৭৪ শতাংশ, এইচ আর টেক্সটাইলের দর ৫.৭১ শতাংশ, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সের তর ৫.৬১ শতাংশ বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি দর হ্রাস পাওয়া ১০টির মধ্যে অর্ধেক অর্থা পাঁচটিই বিমা খাতের। আর সবগুলোর দরই হ্রাস পেয়েছে পতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আপেপাশেই।
তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ২ শতাংশ। আগের দিন ৬৫ টাকায় লেনদেন হওয়া প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৬৩ টাকা ৭০ পয়সায়।
টানা বাড়তে থাকা ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের দর কমেছে ১.৯৯ শতাংশ। এক হাজার ৯৩৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৮৯৮ টাকা ৮০ পয়সায়।
একই পরিমাণ দর কমেছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির দর। ২০৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০১ টাকা ৮০ পয়সা।
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর কমে ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩৪ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
এর পরেই মনোস্পুল পেপারের দর ১৯৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে ১৮৯ টাকা ৪০ পয়সায়, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের দর ৪০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সায়, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস ১৪২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩৯ টাকা ৭০ পয়সায়, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স ৬১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬০ টাকায়, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ৪০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৪০ টাকা ১০ পয়সায় এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ৮১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে ৮০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।