চালের বাজার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটি খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘প্যাকেটজাত করার পর চালের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি কীভাবে হয় সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
বোরো ধান ওঠার পর চালের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
চালের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আতঙ্ক ছড়িয়ে চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে যেভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিক সেইভাবে কোনো একটি গোষ্ঠী চালের বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।’
গত কয়েক বছরে চালের বাজারে নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা। স্কয়ার, সিটি গ্রুপ, প্রাণ, আকিজ, এসিআইয়ের মতো কোম্পানিগুলো লাখ লাখ টন চাল সরবরাহ করছে।
সম্প্রতি চালের দরে ঊর্ধ্বগতির পর মিল মালিকরা দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে আসছেন।
এই পরিস্থিতিতে এ সভায় চালের মিল মালিক, সিটি, প্রাণ, আকিজ, মেঘনা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলসহ বিভিন্ন করপোরেট হাউসের প্রতিনিধি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী বলেন, ‘করপোরেট বড়জোর ৮ থেকে ৯ শতাংশ চাল সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এই স্বল্প পরিমাণ সংগ্রহের কারণে বাজারে এত বড় প্রভাব পড়ার কথা নয়।’
প্রাণ গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘ধানের ও চালের ক্ষেত্রে মৌসুমি ব্যবসায়ী তৈরি হয়েছে, যারা চাল কিনে বিভিন্ন গুদামে মজুত রাখছে।’
তিনি জানান, মাসে তাদের প্যাকেটজাত চাল ৫০০ থেকে ৬০০ টন বিক্রি হলেও গত দুই মাসে তা কমে অর্ধেকে নেমেছে।
চাল উৎপাদন নিয়মিত হচ্ছে জানিয়ে এসিআই গ্রুপের প্রতিনিধি জানান, তাদের দৈনিক চাল উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ টন।
সভায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘ক্রয়াদেশ দিলে মিলাররা সময়মতো চাল দেন না। তাদের কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদন কম হয়েছে। দাম বেড়ে যাবে। সেখানে অভিযান চালাতে হবে।
‘তা ছাড়া মিল থেকে চাল কিনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। একই মানের খোলা চালের চেয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলো হাজার হাজার টন ধান রেখেছে গুদামে। বিক্রি করছে না। কোনো কোনো মিলার ঢাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের চালের কেজি ১০০ টাকায় পৌঁছাবে বলেও জানিয়েছেন। ফলে পাইকাররাও চালের সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এভাবে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।’
মজুত জানানোর নির্দেশ
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, তারা চালের মজুত খতিয়ে দেখবেন। কোন মিলে কত চাল মজুত আছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তা জানাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘চালের বাজারে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তার কোনো কারণ নেই। মজুত করে অস্থিরতা করা হচ্ছে।’
তেলের মতো এখানেও অভিযান চলবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার এ বছর মোট ১১ লাখ টন চাল কিনবে। এর জন্য এত আতঙ্ক তৈরি হওয়ার কথা নয়। মিল মালিকদের কাছে কী পরিমাণ চাল মজুত আছে, তা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। এরপর আগামী সপ্তাহে চালের মিলে অভিযান করা হবে।’
এত চাল কেন বিক্রি হচ্ছে?
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাগর অটোরাইস মিলের মালিক মুনসুর রহমান বলেন, ‘এবার ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমিক সংকটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্য বছরের চেয়ে শ্রমিক খরচও বেড়েছে। ফলে ধানের দাম কিছুটা বেড়েছে।
‘তবে অন্য বছরের এই সময়ের চেয়ে এ বছর বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। কোনো মিলে চাল মজুত নেই। ক্রেতাদের সিরিয়াল লেগে গেছে। ক্রেতারা কেন এত বেশি চাল কিনছেন তা বুঝতে পারছি না।’
খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর কিছুটা দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন আগে মিলগেটে ৫০ কেজি চালের যে বস্তা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। তা খুচরা বাজারে কীভাবে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে?’