গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সহ রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এক বিবৃতিতে বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় জ্বালানির বৈশ্বিক সরবরাহে অস্থিরতার মধ্যেও দেশে গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
আর ওভেন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া হয়তো সরকারের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কিন্তু আমরা পোশাক রপ্তানিকারকরা এর ফলে ক্ষতির সম্মুখিন হবো। আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে টিকতে পারবো না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে পেরেশানিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সংসার খরচ আরও বাড়িয়ে রোববার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছে।
খুচরা পর্যায়ে সেই মূল্য সমন্বয় করে যানবাহনে ব্যবহারের সিএনজি বাদে সব পর্যায়েই গ্যাসের জন্য খরচ বাড়বে।
রান্নার গ্যাসের জন্য দুই চুলার (ডাবল বার্নার) মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ১০৮০ টাকা। এক চুলার মাসিক বিল ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা করা হয়েছে।
আর প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা। সার্ভার সিস্টেম আপডেটে করার মাধ্যমে এ মাসেই নতুন দাম কার্যকর হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ০২ পয়সা করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬ টাকা। আর সার কারখানার জন্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে।
শিল্প কারখানায় আগে গ্যাসের মূল্য ছিল প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা ৭০ পয়সা। এখন বৃহৎ শিল্পকে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পকে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা করে দিতে হবে।
এফবিসিসিআই
গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বৈশ্বিক সরবরাহে অস্থিরতার মধ্যেও দেশে গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। এজন্য আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম খুবই সামান্য বাড়ানো হয়েছে। এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। এতে করোনার ধাক্কায় এই খাতের যে ক্ষতির হয়েছিল, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়াও সিএনজির দাম অপরিবর্তিত রাখার ফলে গণপরিবহনের ভাড়া আগের মতোই থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
‘এফবিসিসিআই মনে করে দেশের সব ধরনের শিল্পখাতের সক্ষমতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্যাসের দাম নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দেশের শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে।’
শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই প্রধান।
বিকেএমইএ
বিকেএমইএ সভাপতি সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন রোববার এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য হারসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের সামগ্রিক মূল্য বৃদ্ধি যা ভারিত গড় মূল্যে প্রতিফলিত হয় তা প্রতি ঘনমিটারে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বর্ধিত মূল্য জুন মাস থেকে প্রযোজ্য ও কার্যকর হবে।
তৈরি পোশাক শিল্পে বহুল ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের মূল্য ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহৎ শিল্পে গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটারে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে এই মূল্য ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা করা হয়েছে।
সেলিম ওসমান বলেন, ‘বিইআরসি সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে এই হার নির্ধারণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিইআরসিকে যে পরামর্শ প্রদান করেছেন সেজন্য আমরা তার প্রতি গভীর ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বিএআরসির চেয়ারম্যানকে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যবস্থায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গ্যাসের মূল্য আমরা সমন্বয় করতে পারবো এবং সরকারের সহযোগিতায় নিটওয়্যার রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবো।’
বিজিএমইএ
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সে কারণে তার প্রতিক্রিয়া নেয়া সম্ভব হয়নি। সংগঠনিটির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতিও দেয়া হয়নি।
রাতে বিজিএমইএ মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই অর্থনৈতিক সংকট চলছে। গ্যাস-জ্বালানি তেল, খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দামই বাড়ছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ছে। তাই বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া হয়তো সরকারের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তবে এ কথাও ঠিক যে, আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কিন্তু কিছুই করার নেই। সরকার আর কতো ভর্তুকি দেবে। সবাই মিলেই এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’