সেপ্টেম্বর থেকে পথ হারা পুঁজিবাজারে টানা সাত কর্মদিবস সূচক বাড়ার ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে লেনদেনও।
ইউক্রেন যুদ্ধে চাপে পড়া বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশের পুঁজিবাজার টালমাটাল হয়ে উঠে নানা গুজব ও আশঙ্কায়। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকের পর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে ঘটে নাটকীয় ঘটনা।
বৈঠকের পর ২৩ মে বড় লাফ দিলেও পরের দুই দিন আবার দরপতন দেখে পুঁজিবাজার। তবে ২৬ মে থেকে শুরু হয় উত্থান।
এর মধ্যে একদিন বড় উত্থান হলেও বাকি ছয় দিন প্রতি দিনই সূচক বাড়তে থাকে অল্প অল্প করে। এই বিষয়টিই বিনিয়োগকারীদের মনের আশঙ্কা দূর করতে সহায়তা করছে।
এই সাত কর্মদিবসে সূচক বেড়েছে মোট ৩০৯ পয়েন্ট।
সব শেয়ার বিক্রি করে বসে থাকা বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে শেয়ার কেনা শুরু করেছেন, সেটি স্পষ্ট লেনদেনে।
গত ৩১ মে লেনদেন ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা, পরের দিন বেড়ে হয় ৭৪৩ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ২ জুন তা আরও বেড়ে হয় ৮৭৫ কোটি টাকা। চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার হাজার কোটি ছুঁই ছুঁই লেনদেন দেখল পুঁজিবাজার।
২০২টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির দিন সূচক বেড়েছে ৪৫ পয়েন্ট, লেনদেন হয়েছে ৯৫০ কোটি ১০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বেশি বাড়ে শেষ সময়ের ক্রয়চাপে
টানা ছয় কর্মদিবস বাড়ার পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। বেলা ১০টা ৫৭ পর্যন্ত তা বাড়ে এক টানা। এরপর সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সূচক সেখান থেকে কিছুটা কমে। তবে আগের দিনের নিচে নামেনি কখনও। এরপর থেকে সূচক আবার বাড়তে থাকে। বেরা সোয়া একটায় দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল সূচক। সে সময় আগের দিনের চেয়ে সূচক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান এখন গত ১২ মের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৬৫৬ কোটি আর বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৪৯৭ পয়েন্ট।
সূচক বাড়াতে প্রধান ভূমিকায় ছিল বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণ ফোন ও ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো। অন্যদিকে খাত হিসেবে সবচেয়ে ভালো করেছে বিমা।
এই খাতের সাধারণ বিমার ৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে একটির দর, অপরিবর্তিত থাকে বাকি একটির দর। জীবন বিমা খাতের ১৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে প্রতিটিরই।
প্রধান অন্য খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে তিনটি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৮টির, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৬টির বিপরীতে ১৫টির, প্রকৌশল খাতে ১৪টির বিপরীতে ২৬টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১২টির বিপরীতে বেড়েছে ১৯টির দর। মিউচ্যুয়াল ফান্ড কাতে ৫টির বিপরীতে বেড়েছে ১৬টির ইউনিট দর।
বেশিরভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির দিনে বস্ত্র খাতে ১৯টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৮টির দর। ব্যাংক খাতে ১১টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০টির, আর্থিক খাতে ৭টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১১টির, বিবিধ খাতে ৬টির বিপরীতে কমেছে ৮টির দর।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বিমার প্রাধান্য
সবচেয়ে বেশি ৯.৯৬ শতাংশ দর বেড়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের দর। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় ছিল আরও চারটি বিমা কোম্পানি। এর মধ্যে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দর ৮.০৫ শতাংশ, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.০৭ শতাংশ, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.০৬ শতাংশ এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৭.০৩ শতাংশ।
শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুটি লোকসানি কোম্পানি। এর মধ্যে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৯.১৫ শতাংশ এবং মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর বেড়েছে ৯.০৯ শতাংশ।
জ্বালানি খাতের দুটি কোম্পানিও ছিল এই তালিকায়। এর মধ্যে জিবিবি পাওয়ারের দর ৮.৩৩ শতাংশ এবং লুব রেফের দর ৭.২৬ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিটি হলো তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিডিকম, যার দর বেড়েছে ৬.৯৩ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও ৮টি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৫টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৮টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৫টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ২৭টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
এই উত্থানের দিনও ৩০টিরও বেশি কোম্পানির দর কমেছে দিনের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ বা আশেপাশে। এর মধ্যে বেশ কিছু ছিল ব্যাংক খাতের কোম্পানি, যেগুলোর দর এমনিতেই তলানিতে আছে।