বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও দেশে ভোক্তা বৃদ্ধির কারণে প্রত্যাশিত মাত্রায় রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার ‘জাতীয় চা দিবস-২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটা দাবি করেছেন।
‘চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টি-বোর্ড যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন চা-পানে অভ্যস্ত হয়েছে। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে, ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে দিন দিন চায়ের চাহিদা বাড়ছে। একইসঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে।
‘২০০৯ সালে দেশে চা উৎপাদন হতো ৬০ মিলিয়ন কেজি, আর ২০২১ সালে এসে উৎপাদন হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি। তারপরও চা তেমন একটা রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ চা উৎপাদনে মনোযোগী না হলে চাহিদা মেটাতে চা আমদানি করতে হতো।’
দেশে চায়ের উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চায়ের নতুন জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন বৃদ্ধি, নিলাম, বাজারজাতকরণসহ প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা চায়ের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি আরও বাড়াতে চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘চা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। এক সময় রপ্তানি ক্ষেত্রে আমাদের চা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পরাজিত শক্তি চা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা শিল্পকে নতুন করে গড়ে তুলতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। তার ফলে আমাদের চা শিল্প আজ এ অবস্থানে এসেছে।’
ইমরান আহমেদ বলেন, ‘চা শিল্পের রিটার্ন খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় না। একটি চা বাগান থেকে চা পাতা আহরণে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ বছর। চা শিল্প থেকে উৎপাদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য চা শিল্পের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা দরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি ওমর হান্নান, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি এম শাহ আলম এবং বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত টি বোর্ডে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে চা শিল্পে অসামান্য অবদান এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে ৪ জুন জাতীয় চা দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দেশে দ্বিতীয় বারের মতো দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।