শঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি আয়ে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৮৩ কোটি (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এই আয় গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে কম এসেছে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৮৩ কোটি ডলার। এপ্রিলে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৬ কোটি ডলার। গত বছরের মে মাসে আয় হয়েছিল ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
গত বছরের আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি দেশে এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে ৩৮৩ কোটি ডলারের যে আয় দেশে এসেছে, তা গত বছরের মে মাসের চেয়ে ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
করোনা মহমারির মধ্যে ২০২১ সালের মে মাসে কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল, ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
সার্বিক রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি।
লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এমনটিই আশঙ্কা করছিলাম। যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে।’
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৩৯ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে আয় হয়েছিল ৩৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট আয় হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
মোট রপ্তানির ৮১.৬৫ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-মে সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ১১ মাসে সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮১ দশমিক ৬৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২ হাজার ৯৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অন্যান্য খাত
জুলাই-মে সময়ে ১১০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য, ১৪৬ কোটি ৭২ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ১১১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার।
এছাড়া এই দশ মাসে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার, বাইসাইকেল ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩৩ কোটি ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি থেকে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় কমেছে। জুলাই-মে সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ১০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম প্রায় ১৯ শতাংশ।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পুরো অর্থবছরে পোশাক খাত থেকে আয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১১ মাসেই তার চেয়ে বেশি আয় দেশে এসেছে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।