পতনমুখি পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফেরাতে সরকারের নানা উদ্যোগের পর প্রতিদিন সূচক বেড়ে শেষ হলো সপ্তাহের লেনদেন। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস মিলিয়ে টানা ছয় কর্মদিবসে সূচক বাড়ল ২৬৩ পয়েন্ট।
গত সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধনে ছিল পুঁজিবাজার। ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রুশ হামলা, এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে দেখা দেয় ধস।
রোজার শেষে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও ঈদের পর আবার শুরু হয় দরপতন। তবে গত সপ্তাহে সরকার কিছু উদ্যোগ নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু ২০৫ কোটি টাকার তহবিল ছাড় করে তারা।
এসব ঘটনায় বৃহস্পতি থেকে আরেক বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবসের প্রতিদিনই সূচক বাড়ে।
এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আগের সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ২৬ মে ৫০ পয়েন্ট, চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১৩১ পয়েন্ট, পরদিন ১৯ পয়েন্ট, মঙ্গলবার ৪ পয়েন্ট, বুধবার ৪০ পয়েন্ট এবং শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বাড়ল আরও ১৮ পয়েন্ট।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার পর বড় উত্থানের ইঙ্গিত দিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি পুঁজিবাজার। বেলা ১০ টা ৪০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। টাকার অঙ্কে লেনদেনের গতিও ছিল বেশ ভালো।
তবে এরপর থেকে বেড়ে যাওয়া শেয়ারগুলো কিছুটা দর হারাতে থাকে। ফলে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট বেড়েই শেষ হয় লেনদেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চিত্র
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দ্বিতীয়বারের মতো ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পর সবচেয়ে বেশি লেনদেনও দেখল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। বেলা শেষে ৮৭৫ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৭৪৩ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তারও আগের দিন ছিল ৬৩৭ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবারের এই লেনদেন গত ১৩ কর্মদিবসের পর সর্বোচ্চ।
বেলা শেষে বেড়েছে ১৭৯টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৪৬টির আর দর ধরে রাখতে পারে ৫৫টির দর।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংকে বেশিরভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে আর তথ্য প্রযুক্তি ও জীবন বিমায় প্রায় সব কোম্পানির দর বেড়েছে।
এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। জীবন বিমার ১৩টির মধ্যে দাম বাড়ে ১২ কোম্পানির। একটির দর কমে।
ভালো দিন গেছে যেসব খাতে, তার মধ্যে বিবিধতে বেড়েছে ১০টির দর, কমেছে তিনটির। খাদ্য খাতে বেড়েছে ১৪টির দর, কমেছে সাতটির। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বেড়েছে ১৪টি কোম্পানির দর, কমেছে আটটির।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে বেড়েছে ১৮টি কোম্পানির দর, কমেছে ১০টির, বস্ত্র খাতে বেড়েছে ২৬টির দর, কমেছে ১০টির।
বেশ কিছু খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। এর মধ্যে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতে বেড়েছে ১০টি কোম্পানির দর, কমে ১১টির; সাধারণ বিমায় বাড়ে ২১টির দর, কমে ১৮টির; ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে আটটির।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে লোকসানি বন্ধ কোম্পানির দাপট
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে গত এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে না পারা মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দম বেড়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯.৬৫ শতাংশ। এই কোম্পানিটিও রুগ্ন হয়ে অস্তিত্ব সংকটে আছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৭৫ শতাংশ বেড়েছে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ১০ টাকার শেয়ারে ৭ টাকারও বেশি লোকসান দেয়া আরামিট সিমেন্ট।
তিনটি কোম্পানিই স্বল্প মূলধনী এবং প্রায়শই এসব কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়।
শীর্ষ দশে থাকা আরেক কোম্পানি হলো রিংসাইন টেক্সটাইল, যেটি মালিকদের তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মালিকপক্ষের প্রতারণায় বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদনে ফেরাতে কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজ এই কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করতে চায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এরই মধ্যে এই অধিগ্রহণ উদ্যোগে সম্মতি দিয়েছে।
স্বল্প মূলধনি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের দরও দিনের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে লেনদেন হয়। এই কোম্পানিটির দর সম্প্রতি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়ে পর পর দুই দিন সার্কিট ব্রেকারে গিয়ে লেনদেন হয়।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট, পেনিনসুলা চট্টগ্রাম, এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটিক, জেএমআই হসপিটাল, এসোসিয়েট অক্সিজেনও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।
শীর্ষ দশের বাইরে একটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, তিনটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৬টি কোম্পানির পর ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
অন্যদিকে শীর্ষ দরপতন হওয়া ২০টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে তার দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশের কাছাকাছি। সব মিলিয়ে ৫৫টি কোম্পানির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।