বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চালের বাজারে অভিযান: মিল মালিকদের দুষছেন ব্যবসায়ীরা

  •    
  • ১ জুন, ২০২২ ১৮:০৫

অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান-চাল মজুত করে রাখছেন। একইভাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনের নীতি অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ধান-চালের ব্যবসায় নেমেছে। তারা প্যাকেটজাত আকারে সেগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে বিক্রি করছে। এতে চালের ক্রয়ক্ষমতা ভোক্তার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ভরা মৌসুমে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় মোকাম, চাতাল ও মিল মালিকদের দুষছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে অতিরিক্ত চাল কিনে মজুত করে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী চাল মিলছে না। পেলেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

চালের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়তে অভিযান চলছে। চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই অভিযানে নামে খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা।

মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা মার্কেটে অভিযান চালিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব অভিযানে চাল ব্যবসার লাইসেন্স আছে কি না এবং অনুমোদনের বেশি মজুত করা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফুড গ্রেইন লাইসেন্স যাচাইয়ের পাশাপাশি খাদ্যশস্যের ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদও যাচাই করে দেখছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। একইসঙ্গে মিল গেটে কী মূল্যে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা দেখা হচ্ছে।

রাজধানীতে গত দুই দিনের অভিযানে দেখা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযান শুরুর পরই দোকান বন্ধ করে বা ফাঁকা রেখে সরে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদেরও অনেকে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে ব্যবসা করছেন।

খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ মজুত রাখতে পারবেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই ব্যবসায়ীদের। আবার ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে দোকানে কী পরিমাণ মজুত আছে তার কোনো সঠিক হিসাব পাননি অভিযানে নামা কর্মকর্তারা।

তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, লাইসেন্স করা থাকলে সংশ্লিষ্ট দোকানি ৩০ দিনে ৩০০ টন চাল মজুত রাখতে পারবেন। আর লাইসেন্স না থাকলে মোটামুটি ৫০ টন রাখার সুযোগ রয়েছে।

অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান-চাল মজুত করে রাখছেন। একইভাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনের নীতি অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ধান-চালের ব্যবসায় নেমেছে। তারা প্যাকেটজাত আকারে সেগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে বিক্রি করছে। এতে চালের ক্রয়ক্ষমতা ভোক্তার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে অভিযান

বুধবার দুপুর ১২টায় কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে চালের আড়তে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মর্জিনা আক্তার। তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা ওই মার্কেটে অবস্থান করে বাজার পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও চালের মজুত পরিস্থিতি যাচাই করেন।

তবে বাবুবাজারের মতো কারওয়া বাজারেও অভিযান শুরুর পর দোকান রেখে ব্যবসায়ীদের সরে যেতে দেখা গেছে।

কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘আমাদের এখানে আর কতটুক চাল রাখতে পারি! মোকাম, চাতাল ও মিল মালিকদের ধরেন। ওরা বাজার থেকে কিনে সব মজুত করে রাখছে। ফলে আমরা স্বাভাবিক সরবরাহটাও পাচ্ছি না। মার্কেট ওদের নিয়ন্ত্রণে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এই অভিযানগুলো তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তাহলে এই কারসাজির নেপথ্যের লোকদের বের করা যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায় থেকে নেয়া তথ্যগুলো উর্ধ্বতনদের জানাব। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। ব্যবসায়ীরা যে অভিযোগগুলো করছেন, সেগুলোর বিষয়ে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’

বাবুবাজার ও বাদামতলীতে অভিযান

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার বিকেলে বাবুবাজারে চালের মার্কেটে অভিযান চালানো হয়। তবে এদিন অভিযান শুরুর পর মার্কেটের অধিকাংশ দোকানি শাটার নামিয়ে চলে যান। ফলে অধিকাংশ দোকান পরিদর্শন ছাড়াই তাদেরকে ফিরে আসতে হয়।

রাজধানীতে চালের এই বৃহৎ পাইকারি বাজারে বুধবার বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। দুই/একটি ছাড়া প্রায় সব দোকানেই লাইসেন্সসহ যাবতীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক পেয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

একই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন সদস্যের একটি টিম বাদামতলী সংলগ্ন দোকানগুলো মনিটরিং করেন। তবে প্রথম দোকানেই তারা ফুড গ্রেড লাইসেন্স পাননি। বাকি দোকানগুলোর মজুত পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক ছিল।

অভিযানে প্রথম দোকান মেসার্স আফরা রাইস এজেন্সি দুই বছর যাবত ব্যবসা করলেও দোকানের কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা কোনো কাগজপত্র পায়নি অভিযান পরিচালনাকারী টিম। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি দোকানে দৈনিক মজুতের পরিমাণ ও চাল কেনাবেচার রসিদ পরীক্ষা করে দেখেন অভিযানকারীরা।

অভিযান শেষে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে অভিযানে এসেছি। এখানে আমরা কোন দোকানের ফুড গ্রেড লাইসেন্স আছে কিনা এবং থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ কি না এসব দেখছি। মজুত পরিস্থিতিও দেখেছি। এসব দেখে মোটামুটি সন্তোষজনক মনে হয়েছে।’

মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, লাইসেন্স করা থাকলে সংশ্লিষ্ট দোকানি ৩০ দিনে ৩০০ টন চাল মজুত রাখতে পারবেন। আর লাইসেন্স না থাকলে মোটামুটি ৫০ টন রাখার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যাদের লাইসেন্সে সমস্যা আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা জজকোর্টে মামলা করব।’

অভিযান পরিচালনাকারী টিমে আরও ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের এমআইএসঅ্যান্ডএম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সেলিমুল আজম ও খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সাইলো) রিয়াজুল আলম। এছাড়াও কোতয়ালী থানার একটি পুলিশ টিম ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দোকানিদের বৈধ কাগজপত্র না থাকা প্রসঙ্গে বাবুবাজার ও কদমতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজামুদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আজ সকালেও প্রতিটি দোকানে লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র রাখার জন্য বলে এসেছি। লিফলেটও বিতরণ করেছি। কথা হচ্ছে, কোনো কিছুই শতভাগ হয় না। কয়েকটি দোকানে সমস্যা থাকতেই পারে। আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বলবো। সংশোধন না হলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো না।’

এ বিভাগের আরো খবর