বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১ জুন, ২০২২ ১৭:১৭

ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগে ৪০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। সংস্থাটি এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছে।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগের পর তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আগামী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পদের হিসাব দিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার এক চিঠিতে তাকে এই নির্দেশ দেয়া হয়।

ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগে ৪০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। সংস্থাটি এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. এজারুল হক আকন্দের দ্বৈত বেঞ্চে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ১৬ জুন শুনানির তারিখ ঠিক করা হয়েছে।

মোশাররফের বিরুদ্ধে দুটি কোম্পানি গঠন করে সেগুলোর নামে প্রভিডেন্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড গঠন করে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪ কোটি টাকার বেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানে ৫০ টাকার বিপক্ষে ১০ টাকা হারে ও স্পন্সর শেয়ারে সন্দেহজনক লেনদেন, আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনসহ দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ হাইকোর্টের নজরে এনে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন করা হয়।

শুনানি শেষে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিএফইইউকে নির্দেশ দেয়।

ড. এম মোশাররফের এসব অনিয়মের বিষয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ তাদের ডাটাবেজে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে।

মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের মে মাসে আইডিআরএর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিমার শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বারবার আলোচনা হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর একই বিষয় আবার আলোচনায় উঠে আসে।

অভিযোগ ওঠে, তিনি নিজেই বিমার শেয়ারে বিনিয়োগ করে পরে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

যেভাবে দুর্নীতি

মোশাররফ এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যান্ড কোম্পানি’র নামে নগদ ৫০ লাখ টাকার দুটি এফডিআর করেন, যার সঙ্গে মোশাররফের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে বিএফআইইউ সন্দেহ প্রকাশ করে।

এই হিসাবের বিবরণীতে ২১ দিন পর ২৮ ডিসেম্বর নগদ অর্থ জমা দেখানো হয়, যার অর্থের উৎস গোপন করা হয়।

‘লাভস অ্যান্ড লাইভ অর্গানিকস লিমিটেড এবং ‘গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বাইরে কাশফুল ডেভেলপার্স লিমিটেড নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ।

এখানেও কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ড ফান্ড গঠন করেন মোশাররফ। এই ফান্ড দুটি পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয় যার চেয়ারম্যান হন তিনি নিজে, সেক্রেটারি তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া এবং অন্যতম সদস্য মোশাররফের শাশুড়ি লাভলি ইয়াসমিন।

বিধি অনুযায়ী কর্মচারীদের প্রদেয় বেতন/মজুরির সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে বোর্ড অফ ট্রাস্টিকে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সেই তিনটি প্রভিডেন্ড ও তিনটি গ্র্যাচুইটি ফান্ড হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ জমা হয় (প্রায় ৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা), তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে পরিচালিত হিসাবে সম্পাদিত লেনদেনের (প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা) সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই ছয়টি ফান্ডের হিসাবে নগদ ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইএফটি, ক্লিয়ারিং ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ জমা হয় এবং ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন, ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বরাবর পে-অর্ডার, অবশিষ্ট ২০ শতাংশ টাকা বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর এবং মোশাররফের নিজের নামে ছয়টি এফডিআর/টিডিআর করা হয়।

এই ছয়টি হিসাবে সম্পাদিত লেনদেনের মাধ্যমে কর ফাঁকির প্রয়াস গ্রহণ করা হয়ে থাকতে পারে মর্মে বিএফআইইউ সন্দেহ প্রকাশ করে।

বিএফআইইউ তাদের পর্যালোচনায় মোশাররফ ঘোষিত পেশা, অর্থের উৎস ও হিসাব খোলার উদ্দেশ্যের সঙ্গে হিসাবগুলোয় সম্পাদিত লেনদেনের অসামঞ্জস্যতা পায়। এসব লেনদেনের সঙ্গে ঘুষ ও দুর্নীতির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে সন্দেহে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১) (ক) ধারার আওতায় এ বিষয়ে বিএফআইইউ ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠায়।

সেই প্রতিবেদনে ব্যাংক হিসাবে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ লেনদেন, প্রভিডেন্ড/গ্র্যাচুইটি ফান্ড হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে কর ফাঁকির প্রয়াস গ্রহণ এবং বেনামে ৫০ লাখ টাকার এফডিআর খোলার সময় অর্থের উৎস গোপন, ছদ্মাবৃত বা আড়াল করা ও এ ক্ষেত্রে তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তা বা পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

কিন্তু বিএফআইইউ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানোর পর ছয় মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন মোশাররফ হোসেনের বিষয়ে আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে থেকে ফান্ড গঠনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিমা কোম্পানির শেয়ারে অবৈধ লেনদেন এবং তারই (কর্তৃপক্ষের) নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিতে উৎসহীন বিনিয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) তদন্ত চালাচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর