বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেটে অর্ধশত বিলাসপণ্যে বসছে ‘বাড়তি’ শুল্ক

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ২০:৩৮

মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে নতুন বাজেটে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর কথা থাকবে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৫০টির বেশি ‘বিলাস পণ্যের’ ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসছে।

সম্প্রতি অত্যাবশকীয় নয় এমন শতাধিক পণ্যের ওপর সাময়িক সময়ের জন্য যে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এটি তার বাইরে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে নতুন বাজেটে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ৯ জুন নতুন জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।

এসব পণ্যের তালিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: আমদানি করা এয়ারকন্ডিশার, দামি গাড়ি, বাচ্চাদের খেলনা, টেলিভিশন, পারফিউম, রেফ্রিজারেটর, তৈরি করা দামি পোশাক, বিস্কুট, চকলেট, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, ইমিটেশন জুয়েলারি, সাবান ও প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য, মেলামাইন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিপফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, সিরামিক বাথটাব, চশমা, ফুটওয়্যার, সিরামিক টেবিলওয়্যার, সব ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ফ্যান, টিউবলাইট ও অ্যালকোহল।

বর্তমানে ওইসব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হারে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, অগ্রিম আয়করসহ উচ্চ হারে শুল্ক-কর আরোপ আছে। আগামী বাজেটে বিদ্যমান শুল্কের পাশাপাশি বাড়তি আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ হতে পারে।

বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হলে ওইসব পণ্যের দাম দেশীয় বাজারে আরও বেড়ে যেতে পারে।

তবে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, সামাজিকভাবে অনভিপ্রেত ও অত্যাবশকীয় নয় এমন পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করলে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমানো। সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আইনে বিলাসপণ্যের সংজ্ঞা নেই। তবে যেসব পণ্যে শুল্কহার বেশি এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়, সেগুলো সাধারণভাবে বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এনবিআর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ওইসব পণ্যের খসড়া তালিকা করে বাড়তি শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও তেলসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে জাহাজ ভাড়াও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এর চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।

আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের প্রবাহও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে বিশাল ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ।

মঙ্গলবার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই তাকে আগে নিরাপদ ধরা হতো। বর্তমানে আইএমএফ মনে করে, বিশ্বব্যাপী অস্থির পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকা দরকার। তবে খাদ্য আমদানি করতে হলে রিজার্ভ আরও বেশি থাকতে হবে।

বাংলাদেশকে বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে দেড় হাজার কোটি ডলারের খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে আরও বেশি রিজার্ভ থাকতে হবে। কিন্তু রেমিট্যান্স কমা ও আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো কমে যাচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে অন্যান্য খাতে রিজার্ভের ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে।

ডলার সাশ্রয় করতে এরই মধ্যে আবশ্যকীয় ছাড়া সব পণ্যে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

তাতেও ডলারের ওপর চাপ কমছে না। ফলে ডলারের দাম আরও বৃদ্ধির পাশাপাশি বিলাসপণ্যের আমদানির লাগাম টেনে ধরতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে নতুন বাজেটে।

এনবিআর সূত্র বলেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে আরও কিছু বিলাসপণ্যের শুল্কহার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে।

বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বহুমুখী নিয়ন্ত্রণ থাকাটা ভালো। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।’

২০০০ সালের শেষ দিকে রিজার্ভ কমে গেলে শিল্পের কাঁচামাল এবং বাণিজ্যিক আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা শিথিল করা হয়। রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০০৩ সাল থেকে এলসি মার্জিন তুলে নিয়ে ব্যাংক গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।

প্রায় ১৯ বছর পর বৈশ্বিক কারণে রিজার্ভ সংকটে পড়ায় এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর