বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চামড়া খাতে মূল সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ১৮:৩২

জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘চামড়া খাতের  ঠিকমত পরিচর্চা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন রপ্তানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।’

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব। কমপ্লায়েন্সের অভাবে এই সুযোগ নিতে পারছেন খাতটির ব্যবসায়ীরা। তাই সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে শিল্প, বন ও পরিবেশ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এজন্য চামড়া খাত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে জানান খাতটি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান র‍্যাপিড।

মঙ্গলবার দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) যৌথ আয়োজনে এক ওয়েবিনারের এমন কথা বলেন বক্তারা।

‘ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ।

জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘চামড়া খাতের ঠিকমত পরিচর্চা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন রপ্তানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয়ান, ইতালিয়ান ও ভারতীয় কোম্পানি আসছে। কিন্তু কারও কাছ থেকে সমাধানের ভালো প্রকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার নায্যমূল্য নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ। কোরবানির সময় চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সে দাম পান না।’

এ সময় তিনি নতুন চামড়া শিল্প এলাকা সাভারের সিইটিপি প্রসঙ্গে কথা বলেন।

সচিব বলেন, ‘আগের ইটিপি আর এখনকার ইটিপি আলাদা। ইটিপির ১০৯টি নজেলের কেমিক্যাল নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি মডিউল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। আগের তুলনায় ইটিপির কমপ্লায়েন্স অনেক ভালো। আগামীতে আরও ভালো হবে।’

এ সময় রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

হাজারীবাগকে রেড জোন থেকে বের করার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘হাজারীবাগে বাই প্রডাক্ট করার সুযোগ রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হবে, রপ্তানি আয় হবে। এ জন্য নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, চামড়া খাতে ভালো না করার একমাত্র কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্সের অভাব। পরিবেশগত, সামাজিক ও মানের দিকে জোর দিতে হবে। কমপ্লায়েন্স না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ পণ্যমূল্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম পাচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ব্যবস্থাপনা কার্যকর ও দক্ষ উদ্যোগ দরকার।

তিনি বলেন, ‘চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি। উদ্যোক্তারা আর্থিক সহায়তার চেয়ে নীতি সহায়তা বেশি চান। হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এই খাত আশানুরূপ সুবিধা পায়নি। চামড়া খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। এই ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানা সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধই করতে পারেনি। ফলে ওইসব কারখানা প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। একটা ম্যাপিং করে এগোনো গেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব।’

এ সময় চামড়া খাতের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ সময়ে চামড়া পণ্যের বাজারে নিজেদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজস্ব কাঁচামাল থাকলেও কমপ্লায়েন্সের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে কাঁচা চামড়ার রপ্তানি কমেছে ৭৯ শতাংশ। আর ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি বেড়েছে ৮০ ভাগ। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না। কারণ এ খাতের কোনো নীতিমালা বাস্তবায়ন হয়নি।’

তিনি হাজারীবাগ থেকে রেড জোনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চামড়া খাত এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। শ্রম ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকার চামড়া খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করছে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, চামড়া খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য এ খাতকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা উচিত।

ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী।

এ বিভাগের আরো খবর