বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেটে যা দেখতে চান প্রান্তিক মানুষেরা

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ১৮:১৩

৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী এক বছরে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আড়াই লাখ কোটি টাকা ব্যয় করবে। এর বেশির ভাগই ব্যয় করা হবে পরিবহন, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কয়েক জনের কাছে নিউজবাংলা জানতে চেয়েছে, তারা এবার কেমন বাজেট দেখতে চান।

‘প্রতিবন্ধীদের আয়করে আরও ছাড় চাই’

নাজমা ইয়াসমীন একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন যোগ্য মানুষ হিসেবে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্তমানে ইডেন মহিলা কলেজের প্রভাষক।

আসন্ন বাজেটে প্রত্যাশা কী– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অনগ্রসর জনগোষ্ঠী আছি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে।

‘জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবন্ধীরা স্বাভাবিক মানুষের মতো চলেফেরা করতে পারে না। পাঁচ মিনিটের রাস্তা হেঁটে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে তাকে রিকশায় চড়তে হচ্ছে।

‘প্রতিবন্ধীদের পরিবার পরিজন আছে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বেড়েছে। দৃষ্টিহীনরা স্বাভাবিকদের মতো চলাফেরা করতে পারে না। ফলে তাদের পরিবহণ খরচ বেশি। এসব কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

‘এসব ব্যয় বহন করার পর অবশিষ্ট যা থাকে, তা থেকে আয়কর দেয়া আমাদের জন্য কষ্টকর। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সবার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি। কারণ, তারা নিজেরা চলতে পারে না।

‘সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আগামী বাজেটে প্রতিবন্ধীদের আয়করে আরও ছাড় দিলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে তারা।

‘বর্তমানে প্রতিবন্ধী করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয় সীমা সাড়ে চার লাখ টাকা। এই সীমা কমপক্ষে ৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা উচিৎ।

‘প্রতিবন্ধীদের ছেলেমেয়েদের জন্য বর্তমানে শিক্ষার কোনো স্তরে কোটা ব্যবস্থা নেই। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের জন্য কোটা থাকা উচিত।

‘অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের মাসিক ভাতা দেয় সরকার। টাকার অঙ্ক ৭৫০ টাকা। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে ভাতার অঙ্ক অত্যন্ত অপ্রতুল। এটি কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা বাড়ানো উচিত।

‘পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটি সেবার ‍বিলে ছাড় থাকা উচিত। এসব সেবায় সাধারণ জনগণ বর্তমানে মাসিক যে পরিমাণ বিল পরিশোধ করেন, তা থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ কম বিল প্রতিবন্ধীদের জন্য ছাড় দেয়ার উচিত।’

‘ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নে আলাদা বরাদ্দ চাই’

বাজেট বিষয়ক ভাবনা জানতে চাইলে ট্রান্সজেন্ডার উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট জয়া শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে, প্রান্তিক মানুষ যারা সামাজিকভাবে বা কোনো কারণে জেন্ডারাইজ হয়ে গেছে, সেসব মানুষের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে হিজড়া উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়া আমাদের জন্য আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় না। কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণ করানো হয়। বলা হয়, হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে কতটুকু হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বাজেট দরকার।

‘একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে সরকারের কাছে দাবি, হিজড়াদের জন্য বাজেটে পৃথক বরাদ্দ দরকার। সরকার যে বাজেট ঘোষণা করে, সেখানে আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় না।

‘বর্তমানে যারা বয়স্ক, ৫০ বা ৬০ বছর হয়েছে, তাদেরকে মাসে ৬০০ টাকা ভাতা দেয়া হয়। এর বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।

‘হিজড়াদের ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার। আমি মনে করি, এদের সংখ্যা এক লাখের বেশি।

‘বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা সাসটেইনেবল মিলেনিয়াম গোলের দিকে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে দেশ। কিন্তু আমাদের কমিউনিটিকে আর্থিকভাবে যদি সাপোর্ট দেয়া না হয়, তাহলে কীভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হবে? কীভাবে উন্নয়নমুখী হবে?

‘সে জন্য আগামী বাজেটে এ খাতে পৃথক বরাদ্দ এবং তাদের উন্নয়নে যেন সেই অর্থ ব্যবহার হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। একজন ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে এটাই আমার দাবি।

‘সরকার আমাদের ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার মানে রূপান্তরকামী বা লিঙ্গ রূপান্তর। কিন্তু নীতি-নির্ধারকরা কাগজপত্রে লিখছে হিজড়া। ট্রান্সজেন্ডার শুধু মুখে মুখে বলা হয়। এ শব্দগুলো যেন ব্যবহার না করা হয় সেদিকে বিশষ নজর দিতে হবে।’

‘চা শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ায় বরাদ্দ চাই’

কেমন বাজেট দেখতে চান– জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটে সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আমরা অবহেলিত এবং আমাদের যে মজুরি তা দিয়ে মৌলিক অধিকার পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই, আমাদের বিশেষ চাওয়া, সরকার যেন চা শ্রমিকের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আলাদা বরাদ্ধ রাখে। যারা উচ্চশিক্ষা নিতে চায়, তাদের জন্যও আলাদা রান্ধ রাখতে হবে।

‘সেই সাথে প্রান্তিক পর্যায়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত শিক্ষা বিস্তারে।

‘প্রায় ৮০টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী আছে চা বাগানে, যাদের অনেকেরই আলাদা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু তা রক্ষা করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আসন্ন বাজেটে তা রক্ষার জন্য আলাদা সাংস্কৃতিক ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় জনবলের জন্য বরাদ্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর