বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারের জোরালো ভূমিকা দেখতে চান ব্যবসায়ীরা 

  •    
  • ২৯ মে, ২০২২ ২০:৪৬

আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী এক বছরে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আড়াই লাখ কোটি টাকা ব্যয় করবে। এর বেশির ভাগই ব্যয় করা হবে পরিবহন, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে নিউজবাংলা জানতে চেয়েছে, তারা এবার কেমন বাজেট দেখতে চান।

‘পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই কৌশলগত পরিকল্পনা’

আগামী বাজেট কেমন দেখতে চান জানতে চাওয়া হলে ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন: ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্ব খাদ্য ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। বাংলাদেশেও তার প্রভাব ইতিমধ্যে আঁচ করা যাচ্ছে, যা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় সরকারের কৌশলগত পরিকল্পনা জরুরি।

‘বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের মুখে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে দেশে দেশে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশেও তার প্রভাব সরাসরি পড়ছে।

‘আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে বাড়ছে আমদানি ব্যয়, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে।

‘এসব কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে, বিশেষ করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের আয়োজন চলছে। তাই বাজেটে এ বিষয়ে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা থাকা চাই।

‘কৌশলগত বলছি এ কারণে যে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আবার গণতান্ত্রিক সরকারের এই লক্ষ্যও থাকে, দেশে নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব।

‘দেশে নির্ধারিত আয়ের মানুষই বেশি। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে বিদ্যমান কর কাঠামোতে পরিবর্তন এনে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বর্তমানের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। এতে নির্ধারিত আয়ের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো সম্ভব। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ সুবিধা পাবে।

‘খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর দিতে হবে। কৃষক যাতে উৎপাদনে আগ্রহী হয়, সে জন্য ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। সেচ, বিদ্যুৎ, বীজ, কীটনাশক এবং মাড়াই যন্ত্রপাতি সহজলভ্যের মধ্যে রাখতে হবে।

‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনার অর্থ আরও বাড়াতে পারে সরকার। এটা করা গেলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও সুসংহত হবে।

‘মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি মোকাবিলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ’

আগামী বাজেটে কোন দিকগুলোতে নজর দেয়া উচিত, জানতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল- আলম পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ শিল্প, কৃষি এবং রপ্তানিমুখী খাতের সক্ষমতা বাড়ানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত।

‘যতদিন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান না হবে, ততদিন গোটা বিশ্ব খাদ্য, জ্বালানি, উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটে থাকবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলা করাই হবে আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।

‘সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার একটাই পথ খোলা আছে, সেটি হলো অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এর পাশাপাশি শিক্ষা খাতে সংস্কার এবং কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশও ঝুঁকির বাইরে নয়। এ পরিস্থিতিতে মানুষ সংকটে পড়লে বাড়তি ব্যয় কমিয়ে দেবে।

‘যেহেতু ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাচ্ছে, তাই সেসব দেশে কাপড় কেনার চাহিদা কমবে। তখন যদি ক্রেতা-ভোক্তারা সস্তায় জিনিস না পায়, তাহলে রপ্তানি বাজারে টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে করে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় কমে যাবে।

‘এরই মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে গেছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামের উল্লম্ফনে সব ধরনের পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমে গেছে। ব্যয় আরও বেড়ে গেলে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

‘সক্ষমতা বাড়াতে হবে উৎপাদন খাতের। আমাদের উৎপাদনের মূল উৎস কৃষি। এর বাইরে রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনমুখী খাত। এখন আমাদের সেবা পণ্যও রপ্তানি হচ্ছে।

‘শিল্প, কৃষি ও সেবার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার বহুমুখী সুবিধা আছে। এ উদ্যোগ নিলে যেমন আমদানিনির্ভরতা কমবে, পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়বে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সুরক্ষিত থাকবে।

‘অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতের সক্ষমতায় জোর না দিলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে না। এটা না হলে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাড়বে না।

‘আমি মনে করি, সক্ষমতা বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো গেলে বর্তমানের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রেমিট্যান্স আনা সম্ভব।

‘কর্মসংস্থানে শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিতে হবে’

বাজেট নিয়ে ভাবনা জানতে চাওয়া হলে রংপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈষম্য কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শিল্পায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।

‘জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের (এসডিজি) মূল ফোকাস হলো: সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তা ছাড়া ২০২৬ সালের পর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। সে জন্য বেকারত্ব দূর করতে হবে, আয় বাড়িয়ে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। এর জন্য দরকার সবার জন্য সুষম উন্নয়ন। উন্নয়ন পরিকল্পনায় বৈষম্য দূর করা গেলেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

‘স্থানীয় অঞ্চলভেদে নানা ধরনের সমস্যা আছে। তবে একেক এলাকার একেক রকম সমস্যা প্রাধান্য পায়। বাজেট পরিকল্পনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে।

‘আমার অঞ্চলে এখনও কোনো ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানে বেকারত্ব প্রবল। কারণ, শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনও নিশ্চিত হয়নি। এর বিপরীতে রংপুর বিভাগের পরিচিতি হচ্ছে কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। এখানকার অর্থনীতিও কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

‘এ অঞ্চলের কৃষি ফসল সারা দেশের খাদ্যচাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর পেছনে যারা মুখ্য ভূমিকা রাখে, সেই কৃষক ও কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ীদেরও সমস্যা প্রবল। দিন দিন তাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

‘কোনো এলাকায় শিল্পায়ন হলে সেখানে বেকার লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়ে এবং তার জীবনযাত্রারও উন্নতি ঘটে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা শিল্পায়নে উৎসাহ বোধ করেন না।

‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্পায়নের প্রসারে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ চাই। এ সুবিধা দেয়া হলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে।

‘খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি মোকাবিলার একমাত্র উপায় হলো স্থানীয় কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এ ক্ষেত্রে কৃষিতে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। কৃষক পর্যায়ে সার, বীজ ও কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থায় সহায়তা দিতে হবে।

‘সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টে সরাসরি সহায়তার অর্থ পাঠানো হলে কৃষকের অনাগ্রহ দূর হবে। এতে করে রংপুর অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনও বাড়বে, যা দিয়ে সারা দেশের খাদ্য চাহিদার ৮০ শতাংশের জোগান দেয়া সম্ভব।

‘এ অঞ্চলে বেনাপোলের মতো একটি বড় বন্দর চালু করা দরকার। এখানে হিলি, বাংলাবান্ধা, টেরাবান্ধা ও সোনারহাট– চারটি বন্দর থাকলেও কোনোটিই কার্যকর নয়।

‘রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও সম্প্রসারিত করতে চারটি বন্দরের পরিবর্তে বেনাপোলের মতো বিকল্প বন্দর ঘোষণা দেয়া জরুরি। এটি করা গেলে রংপুরে উৎপাদিত পণ্য সহজেই ভারতের সেভেন সিস্টারসহ নেপাল, ভুটানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। একইভাবে ভারত থেকে আসা পণ্য বেনাপোল হয়ে রংপুরে আনার বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যাবেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এ বিভাগের আরো খবর