বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে ডলারের একক রেট ৮৯ টাকা

  •    
  • ২৯ মে, ২০২২ ১৮:৪৮

আন্তব্যাংক দর ডলারের ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থাকলেও গত কয়েক দিনে অনেক ব্যাংক প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনেছে। আর আমদানিকারকদের কাছে তা বিক্রি করেছে ৯৭ টাকা পর্যন্ত দরে। এ ছাড়া খোলা বাজারে ডলারের দর উঠে গেছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায়।

অবশেষে ব্যাংকে ডলারের একক হার বেঁধে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের মধ্যে (আন্তব্যাংক লেনদেন) ৮৯ টাকায় ডলার কেনাবেচা করবে। আমদানি ব্যয় পরিশোধে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।

এই একক দর নির্ধারণ করে দেয়ার মাধ্যমে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরেক দফা কমল। এবার এক ধাক্কাতেই ১ টাকা ১০ পয়সা কমিয়ে আন্তব্যাংক লেনদেনে ৮৯ টাকা করা হয়েছে। গত কয়েক দিন আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।

রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে নতুন বেঁধে দেয়া দর বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রোববার সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে এ নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলোকে ডলার কেনাবেচা করতে হবে।’

আন্তব্যাংক দর ডলারের ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থাকলেও গত কয়েক দিনে অনেক ব্যাংক প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনেছে। আর আমদানিকারকদের কাছে তা বিক্রি করেছে ৯৭ টাকা পর্যন্ত দরে। এ ছাড়া খোলা বাজারে ডলারের দর উঠে গেছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায়।

হঠাৎ করে এভাবে ডলারের দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শনে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে।

অস্থির ডলারের বাজার নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদাকে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর জন্য ডলারের একক রেট বা দর বেঁধে দিয়ে রোববারের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

বাফেদা এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর পর তার ভিত্তিতে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের একক দর বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা সংকটে ঊর্ধ্বমুখী ডলারের দামের অস্থিরতা কমাতে বেশ কিছুদিন থেকেই টাকার মান অবমূল্যায়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি মে মাসে চতুর্থ দফায় ডলারের দাম বাড়ানো হলো।

মে মাসে প্রথম দফায় দর বাড়ানো হয়েছিল ৯ মে। সেদিন ডলারের বিনিময়মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে এ বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা।

আর গত ২৩ মে তৃতীয়বারের মতো ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৪০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তব্যাংক লেনদেনে নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা রোববার পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন সপ্তাহেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

আর চলতি বছর ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমল সাতবার।

গত জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময়মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। তখন ১ ডলারের বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা।

করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। তখন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।

কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টোচিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের রোববার পর্যন্ত ১১ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৬ মে পর্যন্ত) ৫৭০ কোটি (৫.৭০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কমছিল না। একেক ব্যাংক একেক দরে ডলার বিক্রি করছিল।

সে পরিস্থিতিতে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতেই বৃহস্পতিবার গভর্নর ফজলে কবির সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে সব ব্যাংকের জন্য ডলারের একক দর নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সে সিদ্ধান্তের আলোকেই রোববার আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের নতুন দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

বাফেদার প্রস্তাব

বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে বাফেদা রোববার গভর্নরের কাছে বর্তমান আন্তব্যাংক দর ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৯ টাকা করেছে।

আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমান ৮৮ টাকা নেয়া হলেও বাফেদার প্রস্তাব ছিল ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সা করার। নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।

রপ্তানির ক্ষেত্রে বাফেদার প্রস্তাব ছিল ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা; এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর ক্ষেত্রে ৮৯ টাকা ৭৫ পয়সা। এই দুই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

আন্তব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারেও বেশ কিছুদিন থেকে বাড়ছে ডলারের দর, যা গত ১৭ মে ১০৪ টাকায় উঠেছিল। তবে কয়েক দিন থেকে এ দর কিছুটা কমেছে। রোববার সকালে খোলা বাজারে প্রতি ডলার ৯৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় বিক্রি হয়। বিকেলে অবশ্য কিছু বেড়ে ৮৬ টাকায় ৫০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সায় বিক্রি হয়।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামস-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাফেদা ও এবিবির প্রস্তাবনা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে। বর্তমানে ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে সেটা সাময়িক। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নির্ধারিত দরে ডলার বেচাকেনা হলে পরিস্থিতি ভালো হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নতুন করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীব্যাপী অস্থিরতা চলছে। তবে এটা কেটে যাবে। ডলারের বাজারও স্বাভাবিক হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর