জাহাজ নির্মাণশিল্পের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে গ্রাহকদের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে বিতরণ করবে।
জাহাজ নির্মাণশিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে এই পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বা তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দুই বছরের করোনার ধাক্কায় এই খাতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। জাহাজ রপ্তানি তলানিতে নেমে এসেছে। এই তহবিল সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার এই তহবিলের বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারটি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, জাহাজশিল্পের টেকসই উন্নয়ন, রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং আমদানিনির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে এনে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার ‘জাহাজ নির্মাণশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। এরই আলোকে জাহাজ নির্মাণশিল্পের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তহবিলের নাম হচ্ছে জাহাজ নির্মাণশিল্পের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম। তহবিলের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থ জোগান দেয়া হবে। তহবিলের আওতায় জাহাজ নির্মাণশিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ দেয়া হবে।
বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক এ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে আগ্রহী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অফ অফ-সাইট সুপারভিশনের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে।
সরকারের ‘জাহাজ নির্মাণশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১’-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জাহাজ নির্মাণকারী রপ্তানিমুখী ও স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হবে।
তবে এ তহবিল থেকে ডকইয়াড নির্মাণ বা জমি ক্রয়/ইজারার বিপরীতে ঋণ প্রদান করা যাবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক কোনো ঋণখেলাপি এ তহবিল থেকে কোনো ঋণ পাবেন না। এখান থেকে ঋণ নিয়ে কোনোভাবেই অন্য কোনো ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।
সুদের হার
ব্যাংক পর্যায়ে এই তহবিলের ঋণের সুদের হার হবে ১ শতাংশ। আর গ্রাহক পর্যায়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে গ্রাহকদের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে বিতরণ করবে।
মেয়াদ
জাহাজ নির্মাণের জন্য গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১২ বছর (৩ বছর + ৯ বছর) মেয়াদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে ৯ বছরের মধ্যে মাসিক/ত্রৈমাসিক সম কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
চলতি মূলধন ঋণ
এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ১ বছর মেয়াদে চলতি মূলধন ঋণ প্রদান করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক প্রচলিত নিয়মানুসারে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করবে এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক হলে তা নবায়ন করতে পারবে।
তবে নবায়নের মাধ্যমে কোনো গ্রাহক সর্বোচ্চ ৩ বছর এ স্কিমের আওতায় ঘোষিত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন বিবেচনায় চলতি মূলধন বাবদ প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে এ স্কিমের আওতায় প্রদত্ত সুবিধার সময় হ্রাস/বৃদ্ধি করতে পারবে।
কার্যাদেশের বিপরীতে প্রদত্ত ঋণ
কার্যাদেশ/রপ্তানি/বিক্রয় চুক্তির বিপরীতে প্রদত্ত ঋণের মেয়াদ সংশ্লিষ্ট কার্যাদেশ/ রপ্তানি/বিক্রয় চুক্তির শর্তানুযায়ী মূল্য পরিশোধের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারিত হবে। তবে তা কোনোভাবেই বর্ণিত সর্বোচ্চ ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরের অধিক হবে না।
ঋণ বিতরণ পদ্ধতি
গ্রাহকের প্রয়োজন বিবেচনায় বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসরণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণ করা যাবে। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণপূর্বক বিভিন্ন কিস্তিতে ব্যাংক মঞ্জুরিকৃত ঋণ বিতরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কিস্তির পরিমাণ ৩টির কম হবে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছিল। বিশ্ব বাজারে সম্ভাবনা থাকায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ধরা হয়।
কিন্তু মহামারি করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় রপ্তানি হয় মাত্র ২ লাখ ডলারের জাহাজ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ২ লাখ ডলার। অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
দেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাতা ও রপ্তানিকারক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তহবিল আমাদের খুবই সহায়তা করবে।’