সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেনের একেবারে শেষ বেলায় ক্রয়চাপে উত্থান হলো পুঁজিবাজারে। দিনভর সূচকের টানাটানি থাকলেও শেষ সময়ে এসে হঠাৎ দ্রুত বাড়তে থাকে শেয়ারদর, উঠে যায় সূচক।
পুঁজিবাজার চাঙা করতে অর্থমন্ত্রীর নানা নির্দেশনার পরও বাজারে মন্দাভাবের মধ্যে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশে নামিয়ে আনার পর প্রথম কর্মদিবসে এই চিত্র দেখা গেল।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাজারে ধস ঠেকাতে ‘দুই শতাংশের এই বাধা’ দেয়ার পর লেনদেনে যে গতিহীনতা দেখা গিয়েছিল, সেটি থেকে বাজার বের হতে পারেনি। যদিও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি লেনদেন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকের টানাটানি দেখা দেয়। প্রথম এক ঘণ্টায় ১৫ পয়েন্ট পতনে আবার দরপতনের শঙ্কা কাটে পরের আড়াই ঘণ্টায়। তখন সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। বেলা একটা ৪০ মিনিট থেকে এক টানে লাফ দিয়ে বাড়ে সূচক।
এই ৫০ মিনিটে আরও ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন। যদিও লেনদেন শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বেড়েছিল আরও ১৫ পয়েন্ট। তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে ওটা আর যোগ হয়নি।
তারপরেও ৫০ পয়েন্টের এই উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি যোগাবে।
গত রোববার ১১৫ পয়েন্ট মিলিয়ে আট কর্মদিবসে ৫৫৫ পয়েন্ট দরপতনের পর পুঁজিবাজার নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নিয়ে এই বৈঠকে তিনি বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেন।
পাশাপাশি আইসিবির মাধ্যমে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেন। এর পাশাপাশি মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের তহবিলের মেয়াদ ও আকার বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থানের প্রায় পুরোটাই হয়েছে একেবারে শেষ বেলায়
এরপর সোমবার ১১৮ পয়েন্ট উত্থান হয়। কিন্তু এর পরের দুই দিন আবার দরপতনের মধ্য দিয়ে যায় পুঁজিবাজার। মঙ্গলবার ৫০ পয়েন্টের পর বুধবার আরও ২৩ পয়েন্ট হারায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক।
এরপর সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, একদিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২ শতাংশ করা হবে, এটি কার্যকর হবে বৃহস্পতিবার থেকে।
উক্রেনে রুশ হামলার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে গত ৮ মার্চ এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়টি বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা দিলেও পরে দেখা যায়, এটি লেনদেন কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে উঠে আসে।
পুঁজিবাজারে এক দিনে কোনো কোম্পানির ২ শতাংশ দরপতন মোটেও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। দাম কমলে শেয়ারের চাহিদা বাড়লে আবার দর বাড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়। কিন্তু ২ শতাংশের এই নির্দেশনা আসার পর দেখা যাচ্ছিল, ২ শতাংশ দাম কমে গেলে শেয়ারের আর ক্রেতা পাওয়া যায় না। এভাবে দিনের পর দিন কোম্পানিগুলোর দরপতন হচ্ছিল। আর ক্রেতা না থাকায় লেনদেন ক্রমেই কমছিল।
রোজা শুরুর আগে বাজারে এক হাজার এক শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল তা নেমে আসে চার শ কোটি টাকার ঘরে।
এরপর ২০ এপ্রিল দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। লেনদেন বাড়তে থাকে।
তবে ঈদের পর আবার বাজার পতনের ধারায় ফিরে যায়।
বিএসইসি দরপতন রোধে ২ শতাংশে ভর করার পর প্রথম কর্মদিবসে এক দিনেই বাড়ল ২৭৩টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ৬১টির আর দর অপরিবর্তিত থাকে ৪০টির।
বেলা শেষে হাতবদল হয় ৫৩৮ কোটি ৯১ লাখ ৮৯ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ৫১৩ কোটি ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
চামড়া, সিরামিক, কাগজ ও প্রকাশনা, সেবা ও আবাসন, ভ্রমণ ও অবকাশ, পাট ও করপোরেট বন্ড খাতে সব কোম্পানির দরই বেড়েছে।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ভালো দিন গেছে বস্ত্র, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, সাধারণ ও জীবন বিমা, ব্যাংক, আর্থিক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দরই।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ইমাম বাটন গত এক যুগেও লভ্যাংশ দেয়নি লোকসানের কারণে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েল পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি উৎপাদন শুরু করেছে। তবে পুরোদমে উৎপাদনে যেতে আরও এক বছর সময় লাগবে। তবে সরকার ধানের কুঁড়ার তেলের উৎপাদনে জোর দেবে- এমন একটি ঘোষণা আসার পর দাম বাড়ছে।
আরও ছয়টি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৯টি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১৬টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৩টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৪৭টির দর ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
অন্যদিকে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল কমই। আগের দিন দুই শতাংশের বেশি দর কমেছিল অসংখ্য কোম্পানির। সেখানে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এই সংখ্যাটি কমে পাঁচে নেমেছে।